জার্মানির অন্যরকম হ্যাটট্রিক

মাঠে খেলেন ১১ জন ফুটবলার। ম্যাচ নির্ধারণ হয় তাদের পারফরম্যান্সে। লাইম লাইটও খুঁজে নেয় তাদের। কিন্তু নেপথ্য নায়ক হিসেবে যিনি পুরো দলটাকে খেলিয়ে থাকেন সেই তিনিই থেকে যান আড়ালে। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় টমাস টুখেল কালকের ফাইনাল শেষে থাকলেন সবার মধ্যমণি।

টমাস টুখেল

আসলে ধুঁকতে থাকা কোনো দল যখন হঠাৎই বদলে যায় তখনই খোঁজ পড়ে কোচের। টুখেল তেমনই একজন। পাঁচ মাস আগে পিএসজির ব্যর্থতার দায়ে বলির পাঁঠা হতে হয় জার্মান কোচকে। সুযোগটা লুফে নেয় চেলসি। প্রধান কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে সরিয়ে টুখেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় নড়বড়ে চেলসির দায়িত্ব।

আশ্চর্যজনকভাবে জার্মান কোচের অধীনে বদলে যায় চেলসি। এতটাই যে, পশ্চিম লন্ডনের ক্লাবটি হয়ে গেল ইউরোপ সেরা। তাতে অন্যরকম একটা হ্যাটট্রিক হয়ে গেল জার্মানির। টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি জিতলেন জার্মান কোচরা। গত মৌসুমে হানসি ফ্লিক বায়ার্ন মিউনিখকে উপহার দিয়েছিলেন এই টুর্নামেন্টের ট্রফি।

তারও আগের মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপের হাত ধরে বহু বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়েছে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে, তিন কোচই বিপর্যস্ত একটা দলকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় টুর্নামেন্টে। লিভারপুল তো এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে ভুলে গিয়েছিল। ইংলিশ লিগেও তিন দশক ধরে শিরোপা পাচ্ছিল না দলটা।

সেই দলটাকে বদলে দিয়েছেন ক্লপ। ভক্তদের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন ইংলিশ লিগ জিতিয়ে। দলকে নিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। যদিও জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারতে হয়েছিল সেই ম্যাচে। পরের আসরেই শাপমোচন করেন ক্লপ। ১৪ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের রুপালি ট্রফি হাতে নেয় লিভারপুল।

বায়ার্ন মিউনিখ অবশ্য নিয়মিত বিরতি দিয়ে ট্রফি জিতেছে। কিন্তু সাম্প্রতিককালের ফ্ল্যাশ ব্যাকে গেলে দেখা যাবে বায়ার্নও পথ হারিয়েছিল। ইয়ুপ হেইঙ্কেস বাভারিয়ানদের ট্রেবল জিতিয়ে নির্বাসনে চলে গেছেন ২০১৩ সালে। তার শূন্যস্থানে এসে মুলার-লেভাদের দায়িত্ব নেন তিনজন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭-১৮ মৌসুমের জন্য অবসর ভেঙে ফেলেন হেইঙ্কেসকে। পরে আসেন নিকো কোভাক। তার অধীনে আবার পথ হারায় বায়ার্ন মিউনিখ।

জার্মান জায়ান্টদের কক্ষপথে ফেরান ফ্লিক। গত মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন যখন টেবিলের নয় নম্বরে নেমে গিয়েছিল তখনই এলেন ফ্লিক। প্রায় ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে আনেন বাভারিয়ানদের। শেষ পর্যন্ত বায়ার্নকে ‘ট্রেবল’ জিতিয়েই গৌরব ফেরান তিনি। সাম্প্রতিককালে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল এখন এমন মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে উঠছে যে- সাফল্য পেতে চাও, জার্মান কোচদের নিয়ে এসো!