ইসরায়েলে নেতৃত্বের পরিবর্তন, যেভাবে দেখছেন ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলের ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ছেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়া বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১ যুগের আলোচিত-সমালোচিত শাসনের অবসান ঘটছে লিকুদ পার্টির এই নেতার।

নাফতালি বেনেট ও বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, ফাইল ছবি

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নেতানিয়াহুর জায়গায় এবার প্রথমবারের মতো আসীন হতে যাচ্ছেন বিরোধী ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেট। ডান, বাম ও মধ্যপন্থী ৮টি বিরোধী দলের মধ্যে সম্পাদিত এক চুক্তির মাধ্যমে ক্ষতায় আসছেন তিনি।

ক্ষমতার পালা বদল হলেও একটি জায়গায় নেতানিয়াহু ও বেনেট উভয়ই মিলেমিশে একাকার। তা হলো- উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা। তা ছাড়া আরো একটি মিল রয়েছে- গত ১২ বছরে গাজায় যুদ্ধ চাপিয়েছেন নেতানিয়াহ, অন্যদিকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করা সংগঠনের প্রধান ছিলেন বেনেট।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ফাইল ছবি

৪৯ বছর বয়সী বেনেট এক সময় নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায় কাজ করেছেন। মতের অমিল হওয়ায় সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ছিলেন সেনাবাহিনীতে। এরপর ব্যবসার ক্ষেত্রেও সফলতা পেয়েছেন। এগুলো তাকে রাজনীতির মাঠে সফলতা এনে দিয়েছে।

এসব কারণে ইসরায়েলের সরকার পরিবর্তন বা ক্ষমতার পালা বদলের বিষয়টি ইতিবাচক নয়, বরং প্রত্যাখান করেছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজা ও পশ্চিম তীরের মানুষেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যে-ই হোক না কেন ইসরায়েলের আচরণ একই থাকবে, কোনো পরিবর্ত আসবে না।

নাফতালি বেনেট, ফাইল ছবি

যদিও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়ে বেনেট আশ্বাস দিয়েছেন, সংঘাত কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন তিনি। এতে সমস্যা সমাধান না হলেও অবস্থার উন্নতি হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন বেনেট।

ইসরায়েলের হবু প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটকে বলা হয় দেশটির সবচেয়ে উগ্র ডানপন্থী নেতা। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাই প্রত্যাখ্যান করেন। নেতানিয়াহুর চাইতেও কয়েকগুণ আগ্রাসী এই নেতা। বছরের পর বছর দখল করার পর ফিলিস্তিনের জন্য এখনও যেটুকু ভূখণ্ড বাকি আছে, বেনেটের দাবি- সেটুকুও ইসরায়েলকে দিয়ে দিতে হবে।

ফিলিস্তিনের পতাকা

এ বিষয়ে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নেতা বাশেম আল-সালহি বলেন, কঠোরতার দিক দিয়ে নেতানিয়াহুর চেয়ে কোনো অংশেই কম নন বেনেট। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা অবশ্যই প্রমাণ করবেন তিনি।

এদিকে, গাজার নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, এতদিনে অনেক সরকার আসছে-গেছে ইসরায়েলে। এর মধ্যে ডানপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী অনেকেই ছিল। তারা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্নে প্রায় একই ধরনের নীতি নিয়েছে।

ইসরায়েলি পতাকা

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্যালেস্টাইন ন্যাশনালিস্ট ব্যালেড পার্টির নেতা সামি আবু শাহাদে বলছেন, আসলে মূল সমস্যাটা হলো নেতানিয়াহু বা অন্য কোনো একক নেতা নন, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনবিরোধী নীতি। অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন ব্যক্তি নয়, সামগ্রিক নীতির বদল।

বেনেটের ইয়ামিনা পার্টি ছাড়াও জোটবদ্ধ হওয়া দলগুলো হলো- বেনি গান্তজের নেতৃত্বাধীন কাহোল লাভান, ইয়ার লাপিদের ইয়েশ আতিদ, নিতজান হরোউইটস-এর মেরেটজ। আভিগদোর রিয়েবারমানের ইসরায়েল বেইতেইনু, মেরাভ মিশেইলির লেবর, গিডেউন সা’রের নিউ হোপ। মনসুর আব্বাসের মনসুর আব্বাস রাম (আরব ইসলামিস্ট)।

ইয়েশ আটিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিড, ফাইল ছবি

প্রভাবশালী বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদের নেতেৃত্বে নেতানিয়াহু বিরোধী এই জোট গঠনের বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়েছে। এবার বিধি অনুযায়ী তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করবেন। চুক্তি অনুযায়ী, জোটের নেতৃত্বে থাকবে ইয়ামিনা পার্টি। এই পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট প্রথম ২ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর দায়িত্ব নেবেন ইয়ার লাপিদ।

ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেট-এর মোট আসন ১২০টি। সংবিধান অনুযায়ী, কোনো দল বা জোটকে সরকার গঠন করতে হলে ৬১টি আসনের প্রয়োজন পড়ে। এতগুলো আসন না পাওয়ায় এর আগে কয়েকবার নির্বাচন হলেও সরকার গঠন নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এবারও তাই হয়েছে। তাই বিরোধীরা যেন জোট গঠন করতে সফল না হন, সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

তবে জোট গঠন হলেও কতদিন তা টিকে থাকে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ এর আগে একাধিকবার জোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করা হলেও সেই জোট ভেঙে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর ফলে গত ২ বছরে ৪টি নির্বাচন হয়েছে ইসরায়েলে।