ইরানি পরমাণু কেন্দ্রে ‘গোপন অভিযান’র রোমহর্ষক বর্ণনা

ইরানের নাতাঞ্জে পরমাণু স্থাপনার আর্কাইভে ২০১৮ সালে ‘গোপন অভিযান’ চালিয়েছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। হাজার হাজার নথি চুরির সেই ঘটনার প্রথমবারের মতো রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সংস্থাটির সাবেক প্রধান ​ইয়োসি কোহেন।

ইরানের নাতাঞ্জে পরমাণু স্থাপনা ও ইয়োসি কোহেন

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-র সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন কোহেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেটি প্রচার করে গণমাধ্যমটি, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, মোসাদের সাবেক প্রধানরা বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকার দিলেও ইয়োসি কোহেনের বক্তব্যে ‘বিস্ফোরক’ তথ্য রয়েছে। প্রথমবারের মতো তার দেয়া কিছু তথ্যকে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োসি কোহেন, ফাইল ছবি

এতে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে হামলায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার কথা প্রথমবারের মতো প্রায় স্বীকার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিজের শত শত পাসপোর্ট ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করেন ইয়োসি কোহেন।

ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে অপারেশন চালাতে দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নেয় মোসাদের একটি কমান্ডিং টিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলের নাগরিক নন এমন ২০ জন এজেন্টকে দিয়ে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। তারা স্থাপনাটির ওয়্যারহাউসের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভেঙে নথি চুরি করে ইসরায়েলে নিয়ে আসে।

ইরানি পরমাণু স্থাপনা, ফাইল ছবি

পুরো এই অভিযানটি তেল আবিবের একটি কমান্ড সেন্টারে বসে নজরদারি ও পরিচালনা করেন মোসাদ প্রধান ইয়োসি। তিনি বলেন, চুরি করা নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখেটা দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল।

ওই অভিযান শেষে মোসাদ এজেন্টরা নিরাপদে এবং জীবিত অবস্থায় পরমাণু কেন্দ্র ত্যাগ করতে সক্ষম হন। তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে গোপনে বের করে আনা হয় এবং তারা সবাই ভালো আছেন, বলেন ইয়োসি কোহেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু, ফাইল ছবি

চুরি করা এসব নথির বরাত দিয়ে ২০১৮ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সে সময় তিনি বলেন, গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে ইরান, তাদের কাছে এই অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিও রয়েছে।

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে ইরান বলে, নাশকতার কারণে ২০২০ সালের জুলাইয়ে নাতাঞ্জ কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এপ্রিলে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিন সেখানে আবার নাশকতায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়।

ইসরায়েল ও ইরানের পতাকা

এসব ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরমাণু সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগ করে ইরান, যা স্বীকার বা অস্বীকার করেনি তেল আবিব। এখন তেহরারের বিরুদ্ধে আরো কিছু অপারেশন পরিচালনার ইঙ্গিত দিলেন মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন।

এ ছাড়া ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদে হত্যার পেছনেও মোসাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন ইয়োসি। তিনি ২০১৫ সালে সংস্থাটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান, পাঁচ বছরের বেশি সময় পর দায়িত্ব ছাড়েন সম্প্রতি।