ইরানের বিজ্ঞানী হত্যার ‘বিস্ফোরক’ তথ্য দিলো মোসাদ

ইরানের রাজধানী তেহরানের উপকণ্ঠে নিজের গাড়িতে গুপ্তহত্যার শিকার হন দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদে। গত নভেম্বরের ওই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এতদিন তেহরান এমন দাবি করে আসলেও এবার সেই ইঙ্গিতই দিলেন সংস্থাটির সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন।

মোহসিন ফখরিজাদে ও মোসাদ

ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-র সাংবাদিক ইলানা ডায়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে সেটি প্রচার করে গণমাধ্যমটি, যা গোটা মধ্যপ্রচ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ফখরিজাদে হত্যায় মোসাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করেননি ইয়োসি কোহেন। তবে তিনি বলেন, ওই বিজ্ঞানী তাদের অনেক বছরের ‘টার্গেট’ ছিল। তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ইয়োসি কোহেন, ফাইল ছবি

এ সময় ইয়োসি কোহেন এও বলেন যে, কোনো ব্যক্তি ইসরায়েলিদের জন্য হুমকি হয়ে উঠলে অবশ্যই থামতে হবে তাকে। তবে কেউ পেশা বদলালে বা ক্ষতির পথ থেকে সড়ে দাঁড়ালে বেঁচে যেতে পারেন তিনি।

এ সাক্ষাৎকারে ইরানের নাতাঞ্জে পরমাণু স্থাপনার আর্কাইভে ২০১৮ সালে মোসাদের ‘গোপন অভিযানের’ বিষয়ে কথা বলেন ইয়োসি কোহেন। তখন হাজার হাজার নথি চুরির সেই ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি।

ইরানের নাতাঞ্জে পরমাণু স্থাপনা, ফাইল ছবি

ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে অপারেশন চালাতে দুই বছর ধরে প্রস্তুতি নেয় মোসাদের একটি কমান্ডিং টিম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলের নাগরিক নন এমন ২০ জন এজেন্টকে দিয়ে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। তারা স্থাপনাটির ওয়্যারহাউসের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভেঙে নথি চুরি করে ইসরায়েলে নিয়ে আসে, বলেন ইয়োসি কোহেন।

চুরি করা এসব নথির বরাত দিয়ে ২০১৮ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সে সময় তিনি বলেন, গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে ইরান, তাদের কাছে এই অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তিও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু, ফাইল ছবি

বিবিসি জানায়, মোসাদের সাবেক প্রধানরা বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকার দিলেও ইয়োসি কোহেনের বক্তব্যে ‘বিস্ফোরক’ তথ্য রয়েছে। প্রথমবারের মতো তার দেয়া কিছু তথ্যকে ‘বিস্ময়কর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে ছয় জাতি-গোষ্ঠীর সম্পাদিত পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। এমন সময় ইসরায়েলি সামরিক সেন্সরের গন্ডি পেরিয়ে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে ইয়োসির সাক্ষাৎকারটি।

তেহরারের বিরুদ্ধে আরো কিছু অপারেশন পরিচালনার ইঙ্গিত দিলেন মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন। তিনি ২০১৫ সালে সংস্থাটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান, পাঁচ বছরের বেশি সময় পর দায়িত্ব ছাড়েন সম্প্রতি।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োসি কোহেন, ফাইল ছবি

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা চুক্তি সই করে বিশ্বের শক্তিধর ছয় জাতি-গোষ্ঠী। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়ে তেহরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই চুক্তিতে ফিরতে আলোচনার কথা জানিয়েছেন। তবে ইরান বলছে, দেশটি ফিরতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। এ নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হবে না।