কোভিড অ্যাপ ডাটা পেতে কম্বোডিয়াকে চাপে রেখেছে চীন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন কম্বোডিয়া পোস্ট, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘স্টপ কোভিড-১৯’ নামের কিউআর কোড ট্রেসিং অ্যাপ প্রবর্তন করে তখনই মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। অ্যাপটি চালু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই নমপেনে নিযুক্ত চীনের দূত কম্বোডিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং এই অ্যাপটির মাধ্যমে সংগৃহীত সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারে তাদেরও প্রবেশাধিকার দেয়ার অনুরোধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও অ্যাপটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস গ্রুপ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানায়, ব্যক্তি গোপনীয়তা নিয়ে এই ব্যবস্থা ভয়াবহ রকমের শঙ্কা তৈরি করেছে। এটি কম্বোডিয়ার সাধারণ মানুষের ওপর নজরদারি আরো বৃদ্ধি করবে; যা ‘সরকারের সমালোচক ও অ্যাক্টিভিস্টদের বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলবে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে। চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াং ওয়েনটিয়ান বারবার বলেছেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য তাদের হাতে এলে দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণে থাকা লোকজনদের পর্যবেক্ষণে রাখা তাদের জন্য সহজ হবে। যদিও চীন আগত যাত্রীদের জন্য কঠোর কোয়ারান্টাইন মেনে চলছে এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গে তারা সীমান্ত ভাগাভাগি করছে না।
এই অ্যাপের তথ্য পাওয়ার বিনিময়ে কম্বোডিয়ার পোস্ট ও টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয়কে হুয়াওয়ের অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমান কিউআর সিস্টেম আরো আধুনিক করে দেয়ার প্রস্তাব দেয় চীন।
জানা যায়, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তার প্রশাসনের বিরোধীদের দমন ও পর্যবেক্ষণে রাখতে চাইছেন, অন্যদিকে কম্বোডিয়ান ও অন্যান্য বিদেশি বাসিন্দাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে চীনের।
কম্বোডিয়া প্রতিযোগিতায়পূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত; যা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় কৌশলগত চাপ প্রয়োগে চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত এ বিষয়ক প্রথম প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র ও বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়, কম্বোডিয়ার রীম নাভাল বেজের নিকটবর্তী বন্দর শহর শিহানৌকভিলে চীনা সামরিক বাহিনীকে আগামী ৩০ বছর প্রবেশাধিকার দেয়া নিয়ে একটি চুক্তি করেছে কম্বোডিয়া ও চীন। এ সময়ের পর চুক্তিটি প্রতি ১০ বছর অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃ নবায়ন হবে।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার তিনদিন পর কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চুম সোহেট তা প্রত্যাখান করে একে ‘ভুয়া সংবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
২০১০ সাল থেকেই এই সেনা ঘাটিতে যুক্তরাষ্ট্র-কম্বোডিয়ার যৌথ প্রশিক্ষণ ও নৌমহড়া চলে আসছে। কিন্তু ২০১৭ সালে এই দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং এর কিছুদিন পরেই সেখানে চীনের সঙ্গে যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়।
রীম নাভাল বেজে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় নির্মিত স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন চীনের অর্থায়নে নির্মিত নতুন স্থাপনা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণেই সন্দেহ করা হচ্ছে, চীন এখান থেকে সমুদ্রসীমায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
শুধু তাই নয় বিপুল পরিমাণ চীনা বিনিয়োগের সুবাদে শিহাননৌকভিল রীতিমতো একটি আধুনিক শহর হয়ে উঠেছে। কোভিড-১৯ শহরটিতে ছড়িয়ে পড়ার আগেও এটি ছিলো ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য। এই শহরের এক পঞ্চমাংশ বাসিন্দাই এখন স্থায়ী অথবা অস্থায়ী চীনা অভিবাসী। আর এসব বিষয়ের কারণেই কম্বোডিয়ানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে চীন অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
এইচআর ডব্লিউয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট স্থাপনায় প্রবেশকারীদের ফোনে ছয় ডিজিটের কোড সংম্বলিত একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এসব জায়গায় প্রবেশ করতে হলে তাদের ফোনে এই কোড নম্বর প্রবেশ করাতে হয়। আর এভাবেই ডিজিটাল লগের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর সমস্ত তথ্য জানা যায়।
চীন কম্বোডিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বৃহত্তম একক বিনিয়োগকারী। ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি এসব কারণে বেইজিংয়ের যেকোন দাবি মেনে না নেয়া দেশটির পক্ষে কঠিন হবে। অথচ প্রতিবেশী থাইল্যান্ড কৌশলে এ ধরনের একটি বিষয় এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো। গত বছর কম্বোডিয়ার মতো করে থাইল্যান্ডকেও একই ধরনের অনুরোধ করেছিলো চীন। ‘থাই চানা এবং ‘মোর চানা কন্ট্যাক্ট অ্যাপগুলোয় প্রবেশাধিকার চেয়েছিল চীন। কিন্তু বিষয়টি থাইল্যান্ড ‘দক্ষ কূটনীতির’মাধ্যমে চমৎকারভাবে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সূত্র: এশিয়াটাইমস
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.