আপনি পড়ছেন

গত সপ্তাহে ফেডারেল বাজেট ঘোষণার আগে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিম্মকক্ষ জাতীয় পরিষদ। দেশটির সরকারি ও বিরোধী দলীয় নেতারা সংসদে একে অপরকে গালাগালি ও দোষারোপের খেলায় মেতে ওঠেন। আসন্ন আর্থিক বছরের বাজেট ঘোষণার জন্য ১৫ জুন সংসদে বাজেট বিতর্ক হয়। সেখানে বিতর্ক রূপ নেয় কুরুক্ষেত্রে। সরকারি ও বিরোধী দলীয় নেতারা গালাগালি ছাড়াও একে অপরক্ষে লক্ষ্য করে বাজেটের কপি ছুড়ে মারেন। পাকিস্তান পার্লামেন্ট ওইদিন ব্যাপক উশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশের সাক্ষী হয়।

throwing budget books in parliament

হট্টগোলপূর্ণ ওই বাজেট বিতর্কের একদিন পর ১৭ জুন পাকিস্তানের বাজেট পাশ হয়। তবে পার্লামেন্টে প্রকাশ্যে বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংগতই প্রশ্ন তুলেছেন অধিকারকর্মীরা। বিশেষত জাতীয় পরিষদের মতো জায়গায় বাজেট বই ছুড়ে মারা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ বাস্তব যে বিষয়টি লক্ষ্য করার মতো তা হলো- যে বই তাই ছুড়ে মেরেছেন তা ইসলামিক নাম ও কোরআনের আয়াত বহন করে।

বিষয়টি নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা উল্লেখ করেছেন, কোরআনের লিপি ও নামসমূহকে পবিত্র মনে করা হয়। কিন্তু সেসব লিপি সম্বলিত বই ছুড়ে মেরে যে অসম্মান করা হয়েছে তা পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত হওয়ার মতো। কারণ দেশটির ব্লাসফ্লেমি আইন বা ধর্ম অবমাননার আইনের মাধ্যমে অনেককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মুসলিম ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের এ আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন ইসলামিক নাম সম্বলিত কাগজ নষ্ট করে ফেলা বা মেসেজ পাঠানোর অভিযোগেও এ আইনের আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এসবের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য হলো রিমসা মাসিহ’র মামলাটি। ২০১২ সালে ১৪ বছরের এই কিশোরকে কোরআনের পাতা পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত করা হয়। রিমশা পরবর্তীতে সকল অভিযোগ থেকে খালাস পেয়ে যায়। পরে জানা যায়, যে ইমাম তার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলেছিল সেই ইমাম চক্রান্ত করে রিমসাকে ফাঁসায়। অভিযোগ থেকে অব্যাহতির পর রিমসা ও তার পরিবার কানাডায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যায়। ওই ঘটনায় দেখা যায় ভুয়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সংখ্যালঘুদের জন্য কতোটা প্রাণঘাতী। অধিকারকর্মীরা তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন যে ইমাম রিমসাকে ফাঁসাল তাকে কেন ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত করা হচ্ছে না।

পাকিস্তানের এনগেজ ডিরেক্টর আরাফাত মাজহার বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার বিভিন্ন সংজ্ঞা ও অবস্থান রয়েছে মুসলিম দেশগুলোতে। অনেক মুসলিম দেশেই এমন আইন রয়েছে যা ধর্মীয়, পবিত্র ব্যক্তিত্ব বা পুরো ধর্ম নিয়েই পাকিস্তানে প্রণীত সুনির্দিষ্ট আইনগুলোর বিপরীতে রয়েছে।’

এই মাসের শুরুতে সাগুফতা কাউসার ও সাফকাত এমানুয়েল নামে দুজন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইনে অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তারা ধর্ম অবমাননার মতো টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। পরে দেখা যায় তারা কেউই শিক্ষিত নয়, এমনকি পড়তে বা লিখতেও জানে না।

পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭৭ জনকে ব্লাসফেমি আইনে বিচারবহির্ভুতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং শতাধিক মানুষ নিরাপত্তার অভাবে দেশত্যাগ করেছেন। পাকিস্তানের এই আইনের নিন্দা জানিয়ে রেজ্যুলেশন পাস করেছে ইউরোপী ইউনিয়ন।

সূত্র: দ্য পাকিস্তান ডেইলি

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর