বিধিনিষেধ চললেও ‘সুপরিকল্পনায়’ ঈদ পালন

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। তাই ঈদ পর্যন্ত বা ঈদের মধ্যেও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত উপায়ে কোরবানির পশু কেনাবেচা এবং ঈদ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২০ অথবা ২১ জুলাই দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ফাইল ছবি

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আসন্ন ঈদের এক সপ্তাহ অত্যন্ত সুপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে মোকাবেলা করা হবে। আজ সোমবার তিনি বলেন, আমাদের জন্য ঈদটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ইতোমধ্যে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছি যে, দুই সপ্তাহ ধরে (১৪ দিনের লকডাউন) যা অর্জন করব, তৃতীয় সপ্তাহে (ঈদের আগে ও পরে) গিয়ে সেটা যেন নষ্ট না হয়।

আমরা ঈদের সপ্তাহটি একটি সুপরিকল্পনার মধ্য দিয়ে ট্যাকেল করার চেষ্টা করব উল্লেখ করে ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৪ দিনের বিধিনিষেধের সুফলতা পাওয়া গেলেও তা বন্ধ হবে না। বরং এর পরেও সব ধরনের কার্যক্রম সুনিয়ন্ত্রিত ও সুপরিকল্পিতভাবে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদ পর্যন্ত এই অবস্থাটা রাখা গেলে ভালো হতো। কিন্তু যেহেতু ঈদটা সামনে আছে, তাই খুব সংযতভাবেই সেটা আমাদের পার করতে হবে। আমাদের জন্য তৃতীয় সপ্তাহটি যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা ধরেই আমরা কাজ করছি। এক মাস বিধিনিষেধ পালন করা গেলে ভালো হতো। সব কিছু চিন্তা-ভাবনা করেই আমাদের সিদ্ধান নিতে হচ্ছে। তবে ঈদ উপলক্ষে যদিও কিছুটা শিথিল করা হয়, সেটাও হবে সুপরিকল্পিতভাবে।

লকডাউনে চলছে কড়াকড়ি, ফাইল ছবি

প্রসঙ্গত, দেশের অনেক এলাকা এই মুহূর্তে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিপর্যস্ত। সংক্রমণের ভয়াল রূপ নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে আরোপ করা হয়েছে ‘কঠোর লকডাউন’। আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাতে তা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই আজ সোমবার চলমান লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়েছে।

জানা যায়, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঈদের তারিখ নির্ধারণে আগামী ১১ জুলাই সভা করবে। তবে সরকারি ছুটির যে তালিকা বছরের শুরুতে দেওয়া হয়, তাতে ২১ জুলাই ঈদুল আজহা ধরে ২০ থেকে ২২ জুলাই অর্থাৎ মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার- এই তিন দিন ছুটি ধরা আছে। সেই হিসাবে এবার ঈদে সরকারি ছুটি থাকবে ৫ দিন। কারণ ঈদের তিন দিনের ছুটির পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। এই ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

ঈদ উদযাপন, ফাইল ছবি

এর আগে আজ সোমবার বিকেলে- ঈদের সময় চলমান লকডাউন অব্যাহত থাকছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর। তার মতে, এই বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই। সুতরাং মানুষ যদি এই বিধিনিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলে, তাহলে সামনে এর একটা সুফল পাওয়া যাবে। এ কারণে আমাদের সবারই উচিত হবে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলা।

অন্যদিকে, সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত যদি কঠোর বিধিনিষেধ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে সংক্রমণের হার খানিকটা কমে আসতে পারে। আর সেটা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু শর্ত শিথিল করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়ে খুলতে পারে অফিস-আদালত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে বিভিন্ন শর্ত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তও আসতে পারে। তবে এই অবস্থা আবার বেশি দিন স্থায়ী হবে না। বরং এক সপ্তাহ বা দিন দশেক এই শিথিলতা রাখার পর আবারো কঠোর বিধিনিষেধে ফিরতে পারে দেশ।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ঈদুল ফিতরের সময় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৩০ রোজা ধরে সরকারি ছুটি ছিল তিন দিন। যদিও অন্যান্য সময় ২৯ রোজা ধরে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে গেল ঈদুল ফিতরে সাপ্তাহিক মিলে ৪ দিন ছুটি পড়েছিল। তবে ঈদে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। তখনকার চেয়ে বর্তমান পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। তাই আগামী ঈদুল আজহায় সরকারি সিদ্ধান্ত জানতে আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।