আপনি পড়ছেন

বেইজিংয়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট দেশগুলোর সুসম্পর্ক বোঝাতে ইংরেজিতে ‘আইরনক্ল্যাড’ টার্মটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন চীনা কূটনীতিকরা। চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘ব্যতিক্রম’ সম্পর্ক বোঝাতে তারা এটি বারবার ব্যবহার করেন যা বেইজিংকে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত পদচারণার সুযোগ দিয়েছে এবং পাকিস্তানকে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করেছে।

chinese president xi jinping meets pakistani prime minister imran khan

গত মে মাসে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ে তার সার্বীয় সহযোগী নিকোলা সেলোভিকের সঙ্গে চীনা শহর গুইয়াংয়ে সাক্ষাত করেন তখন তিনি ইউরোপে চীনের ‘আয়রনক্ল্যাড’ বন্ধু হিসাবে দেশটির প্রশংসা করেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে কম্বোডিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের সর্ম্পককে বোঝাতে এই টার্মটি ব্যবহার করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্কগুলো প্রধান বিবেচ্য বিষয়, তবে এই শব্দটি প্রায়ই সেই দেশগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যাদের সঙ্গে চীন কৌশলগত সম্পর্ক শেয়ার করতে পারে অথবা পারে না। কিন্তু তবুও তারা ভাল বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করে। ‘আয়রনক্ল্যাড’ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেসব দেশগুলো বেইজিংয়ের আগ্রহের ক্ষেত্রে হুমকি বা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় না।

চীনা ভাষায় ‘টাইগান’ অথবা ‘আয়রনক্ল্যাড’ দুইভাবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ্য হিসেবে এর অর্থ লোহার রেলিং বা লোহার দন্ড। বিশেষণ হিসেবে একে বলা হয় ‘রকসলিড’, বিশেষত একই মানসিকতার বন্ধুত্বকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। সমর্থককে বোঝাতে এর অর্থ ‘ডাইহার্ড’ অথবা ‘হার্ডকোর’ সমর্থক।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু বোঝাতে বেইজিং যখন এই প্রত্যয়টি ব্যবহার করে তখন বিষয়টি নিয়ে অনেক বিশ্লেষক দ্বিমত পোষণ করেন। তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শব্দটিকে আরও কাঁটছাঁট করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানে ইকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এজাজ হোসাইন বলেন, ‘শব্দটি একাডেমিক টেক্সটে যুক্ত হয়েছে ১৯৭০ এর পরে। যুক্তরাষ্ট্রও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে এটি ব্যবহার করে।’

চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ওয়াং ইইউইই বলেন, ‘আয়রনক্ল্যাড মানে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং দৃঢ় যোগাযোগ। এই জাতীয় বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পরিবর্তে একে অপরের মূল স্বার্থকে সম্মান করে।’

চীনা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪টি দেশ ‘আয়রনক্ল্যাড’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে- ব্রাজিল, মিশর, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, মালি, মাল্টা, নামিবিয়া, পাকিস্তান, রোমানিয়া, সার্বিয়া, তানজানিয়া, ইয়েমেন, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে। অন্যরা উল্লেখ করেছে- বেলারুশ, কম্বোডিয়া, কিউবা, মিয়ানমার ও ইউক্রেনের মতো দেশও চীনের সঙ্গে তাদের দৃঢ় ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে এই তালিকার অংশ হতে পারে।

১৯৬৬ সালে যখন চীনে অস্থিতিশীল সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয় তখন এটি কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল এবং আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোকে তার সেরা বন্ধু হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে বেইজিংকে জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জনে সহায়তা করেছিল। বিশ্লেষক চুচেং ফেং বলেন, ১৯৬৭ সালে চীন প্রথমবার জাম্বিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক বোঝাতে ‘ওয়াল অয়েদার’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল।

চীন অধ্যয়নকারী তক্ষশিলা ইনস্টিটিউশনের সহযোগী মনোজ কেওলরমণি উল্লেখ করেন, ‘আয়রনক্ল্যাড’ শব্দটি বর্তমান চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের প্রশাসনের অধীনে আরও বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। ঐতিহাসিক গভীর সম্পর্ক ছাড়াও ‘আয়রনক্ল্যাড’ শব্দটি এমন সম্পর্কগুলো তুলে ধরতে ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে বেইজিং ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক নিশ্চয়তার’ আশ্বাস পেতে পারে।

মনোজ কেওলরমণি বলেন, ‘চীনের ‘‘আয়রনক্ল্যাড’’ সংঘে রাশিয়ার মতো কৌশলগত অংশীদারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যেখানে রাশিয়া দুবছর আগে ‘‘নতুন যুগের জন্য সমন্বয়ের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব’’ গঠনের জন্য চীনের সঙ্গে তার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তবে মস্কোর সঙ্গে এই সর্ম্পককে ‘‘আয়রনক্ল্যাড’’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি।’

কম্বোডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কোঅপারেশন অ্যান্ড পিস’র গবেষণা সহযোগী সোভিন্ডা পো বলেছেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-কম্বোডিয়ান সম্পর্কগুলোকে "আয়রনক্ল্যাড" হিসাবে চিহ্নিত করা শুরু হয় ২০১৬ সালে।’

যদিও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ কম্বোডিয়াকে আরও বেশি অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে, ভিয়েতনামের মতো প্রতিবেশীদের সঙ্গেও এর সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে বেইজিং নমপেনে হ্যানয়ের নিজস্ব দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে।

উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে ভিয়েতনামি বাহিনী কম্বোডিয়াকে বেশ কয়েক বছর ধরে দখলে রেখেছিল। পরে ১৯৭৮ সালে ভিয়েতনাম কম্বোডিয়ায় খেমার রুজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অজুহাতে আক্রমণ করে এবং এক দশক পরে দেশ ছেড়ে চলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীন দক্ষিণ-পশ্চিম কম্বোডিয়ায় নৌ ঘাঁটি তৈরির চিন্তা করছে যা ভিয়েতনামে উদ্বেগের ঘণ্টা বাজিয়েছে।

গত বছর ধরে নমপেন ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল সিনহুকভিলের কম্বোডিয়ার রিম নৌঘাঁটিতে মার্কিন অর্থায়নে দুটি ভবন ভেঙে ফেলার কারণে। ওই সময়ে উদ্বেগ ছিল বেইজিংকে ওই ঘাঁটিতে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই জায়গা থেকে ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্র নমপেনকে আরও চাপ প্রয়োগ করবে চীনের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা কমাতে।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.