যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল ভারতের আফগান পলিসি
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তালেবান মুজাহিদদের হাতে ১৯৯৬ সালে কাবুলের পতনের পর ভারতের পক্ষ থেকে অভিন্ন ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া দুটিই এসেছিল। ১৯৯২ সাল থেকেই ভারত আফগানিস্তানে তাদের কূটনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে গুরুত্ব দেয়।
কিন্তু ১৯৯৬ সালে যখন কাবুল তালেবানের হাতে চলে গেল, তখন দেখা গেল আফগানিস্তানে কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ভারত । তালেবানের আগের উত্থান এবং বর্তমানের উত্থানে ভারতের অবস্থান কেন আলাদা এবং পরবর্তীতে আফগানে ভারতের অবস্থান কোনদিকে যাবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
নাজিবুল্লাহ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহের মাথায় ভারত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল এবং 'রাও ডক্ট্রিন' বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লাগল। আফগান পরিস্থিরি প্রথম দিকেই ভারত ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভারত এই সময় পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও বলয়ের মধ্য দিয়েই কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করতে লাগল।
আগের বছর রাজিব গান্ধী গুপ্তহত্যার শিকার হলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন নরসিমা রাও। ভারত শ্রীলঙ্কার তামিলদের বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে (এলটিটিই) পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করল, তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিল। ভারত পুরোপুরি শ্রীলঙ্গা সরকারের বিরুদ্ধে এলটিটিইকে লেলিয়ে দিল। পরে সেনা পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করল। ভারত নব্বইয়ের গোড়ার দিকে বুঝতে পারল শ্রীলঙ্কা ও শিখদের নিয়ে জবরদস্তিমূলক খেলা ভাল ছিল না। পরে পাঞ্জাব, কাশ্মির ও আসামে বিদ্রোহ দানা বেধে উঠল, যা সামাল দেওয়া ভারতের জন্য কঠিন হয়ে পড়ল।
পরে ৯২ সালে যখন ভারতের ক্ষমতা চেঞ্জ হল, তখন তারা ‘রাও ডকট্রিন’ নিয়ে আফগানিস্তানে নজর দিল। ডকট্রিনের মূল পন্থা ছিল, যখন যেদেশে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের সঙ্গে কাজ করা, যদিও তা বিতরকিত হয়। তারই অংশ হিসেবে ভারত আফগানিস্তানে নজর দিয়েছিল। কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নয়, তারা আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে সম্পরক স্থাপনে গুরুত্ব দিল। সঙ্গে সাউথ এশিয়ান কনটেক্সটও মাথায় ছিল ভারতের।
ভারত মনে করেছিল আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পরক স্থাপন করলে জাতিসংঘে কাশ্মীর নিয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে। গুরুত্বপূরণ বিষয় হলো পাকিস্তান যেহেতু চায় না আফগানিস্তানে ভারত তাদের কূটনৈতিক মিশনে সফল হোক, সেই কারণে ভারত জোর দিয়েই আফগানিস্তানে তাদের তৎপরতা চালাতে চায়। নরসিমা রাও ছিলেন সংস্কারবাদী নেতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের জনক বলা হয় তাকে। আধুনিক ভারত গড়ার ক্ষেত্রে রাও ছিলেন উদারবাদী। এজন্য আফগানিস্তানে তিনি নম্র, শান্ত ও হস্তক্ষেপহীনভাবে কূটনীতি চালাচ্ছিলেন।
ছিয়ানব্বইয়ে তালেবান যখন ক্ষমতায় এলো তখন ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৫%, যা প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের কারণে সম্ভব হয়েছিল। তখন ভারত একটি চাঙ্গা অর্থনৈতিক মুডে ছিল। ঠিক এই সময় তালেবান ক্ষমতা গ্রহণ করল, প্রেসিডেন্ট নজিবুল্লাহ নিহত হলেন। কাশ্মিরের অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে গেল।
ঠিক এসময় ভারত আফগান তাদের আফগান পলিসিতে ইউটার্ন নিতে বাধ্য হল। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি না এলে তারাও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার চিন্তা করল। কাবুলে ভারত তার কূটনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এল। তবে গোপনে তারা তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার চেষ্টা করল।
১৯৯৬-২০০০ ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকল। ভারত গোপনভাবে তালেবানের বিরুদ্ধে রাশিয়া, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দিতে লাগল। ভারতের এই তৎপরতা ব্যাপকভাকে ক্ষিপ্ত করল তালেবানকে।
বিশ্বের অনেক নেতাও ভারতের এই গোপন তৎপরতার নিন্দা করল। সেই যে আফগানিস্তানে ভারত তার নিরপেক্ষতা হারাল, আরও তা উদ্ধার হয়নি। আর এখন ভারত আফগানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী দেশের একটি। এখন তালেবান ক্ষমতায় এলে ভারতের যেকোনো বিনিয়োগ চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.