ডাকাতের ভয় কাটেনি সাড়ে চার দশকেও

৪৫ বছর আগের কথা। সে সময় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে ১৬টি বাড়িতে বসবাস করতেন শতাধিক মানুষ। সমস্যা ছিল, সেখানে প্রায় রাতেই হানা দিত ডাকাত দল। খুন, রাহাজানি, লুটপাট ছিল সে সময়ের নিত্যকার ঘটনা।

জনশূন্য পিচুলগাড়ী গ্রাম

মাঝে মধ্যে হামলা চালিয়ে লুটপাটের পর জ্বালিয়ে দিত বাড়িঘর ও সহায়সম্পদ। তাদের অত্যাচার থেকে ছাড় মিলত না বাড়ির নারীদেরও। ধীরে ধীরে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। এক সময় ওই গ্রাম ছেড়ে চলে যান সব বাসিন্দাই।

এখনো সেই গ্রাম আছে। পুরনো অনেক বাড়িঘরও আছে। কিন্তু এসব ঘরে কেউ বাস করেন না। প্রায় ৪৫ বছর ধরে একই দৃশ্য সেখানে। ফলস্বরূপ জনমানবহীন হয়ে আছে আস্ত একটা গ্রাম।

পিচুলগাড়ী গ্রামের দৃশ্য

চিত্রটি বাংলাদেশের বগুড়ার সাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের পিচুলগাড়ী গ্রামের। ওই গ্রামের বয়স্ক বাসিন্দারা জানান, ১৯৮১ সালে ডাকাতি করতে এসে ডাকাতরা গ্রামের মাতব্বর নান্নু মোল্লার কাছে টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করায় ডাকাতরা তাকে খুন করে। এরপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকায় ওই ঘটনার কিছু দিন পর ভয় আর আতঙ্কে গ্রামের সব বাসিন্দা সেখান থেকে অন্যত্র চলে আসেন। অন্যগ্রামে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন তারা। ধীরে ধীরে সেখানেই তৈরি হতে থাকে তাদের ঠিকানা।

তবে পিচুলগাড়ি গ্রামে মানুষ না থাকলেও সেখানে থেকে গিয়েছে এই সব পরিবারের বসতবাড়ি, জমি। এখন অনেকে সেখানে ফিরতে চান। কিন্তু মানুষ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে আলপথ ছাড়া যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ওই গ্রামের বাসিন্দারা বলছে, গ্রামে ভালো রাস্তা, আলো হলেই তারা ফিরে আসবেন নিজ ভূমিতে।

গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের ইচ্ছা আছে নিজ গ্রামে ফিরে আসার। রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা হলে অনেকেই হয়তো এখানে চলে আসতে শুরু করবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আবেদন করলেই পেচুলগাড়ী থেকে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সঙ্গে সংযোগ রাস্তা করা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।