মাস্ক না পরলে জরিমানার ক্ষমতা পাচ্ছে পুলিশও

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা বা স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করেছে সরকার। সেইসঙ্গে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে জারি করা হয়েছে সর্বাত্ম লকডাউন, যা শেষ হবে ১০ আগস্ট। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে নিয়ম-নীতি মানছেন না বলে অভিযোগ আসছে প্রায়ই। ফলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে মাস্ক না পরলে জারিমানার ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে পুলিশকেও।

মাস্ক ব্যবহারে অনীহা -ফাইল ছবি

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এই শাস্তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দিয়ে থাকলেও অধ্যাদেশ জারি করে তা পুলিশকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আজ মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এই সভায় চলমান লকডাউন আরো ৫ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে শাস্তির ক্ষমতা পুলিশকেও দেয়া প্রয়োজন। মাস্ক না পরা ব্যক্তিদের কিছুটা হলেও জরিমানা করতে পারবেন তারা। এটি করতে হলে অধ্যাদেশ লাগবে, যা নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। আমরা হয়তো সেদিকে যাব।

মাস্ক না পরায় জরিমানা, ফাইল ছবি

সরকারের হাতে বর্তমানে প্রায় সোয়া কোটি করোনা টিকা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরো প্রায় এক কোটি টিকা আসছে এ মাসে। চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে মিলে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের কাজ অনেকটা এগিয়েছে দেশীয় একটি কোম্পানি। এ বিষয়ে অনাপত্তি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

হাসপাতালের ৯০ শতাংশ সিট এরইমধ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আইসিইউ বেড তো নাই বললেই চলে। এমতাবস্থায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ থাকবে না। সেজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে হোটেল খোঁজা হচ্ছে, যাতে খুব বেশি শারীরিক জটিলতা না থাকা রোগীদের সেখানে রেখে চিকিৎসা দেয়া যায়।

চলমান লকডাউন আগামী ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার পরদিন থেকে চলাচল করবে দূরপাল্লার যানসহ সব ধরনের গণপরিবহন। যাতায়াতের সময় টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সকল অফিস, শপিংমল ও দোকানপাটও খুলছে। তবে টিকা না দিয়ে বাইরে বের হলেই শাস্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, গণপরিবহন চলবে রোটেশন পদ্ধতিতে। বাস, লঞ্চ, স্টিমার ও রেল একইভাবে চলবে। চলাচলের সময় চালক, হেলপার ও যাত্রীদের (১৮ বছরের বেশি বয়স) করোনা টিকার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। সাধারণত প্রতিটি রুটে একাধিক কোম্পানির যানবাহন চলে। তবে ১০ তারিখের পর একেকদিন একেকটি কোম্পানির যান চালাতে হবে। যেমন- গাজীপুর-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ১০০ বাস চলাচল করলেও এখন থেকে মালিকানাভিত্তিক ৩০টি বা ৫০টি চলাচল করবে। আজ যেগুলো চলবে, সেগুলো আগামীকাল চলবে না।

এ সময় শ্রমিকসহ সবাইকে টিকা নিতে হবে উল্লেখ করে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, টিকা ছাড়া কেউ কর্মস্থলে যেতে পারবে না, টিকার সার্টিফিকেট থাকতে হবে সবার। টিকা দিলে ওয়েবসাইটে তথ্য থাকবে, সেখানে যাচাই করলেও দেখা যাবে। আগামী এক সপ্তাহে ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে ১ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ড-ইউনিয়নে ৫-৭টা কেন্দ্র করে এসব টিকা দেয়া হবে। টিকা নিতে দৌড়াতে হবে না, সরকারি লোকজনই পৌঁছে যাবে। টিকাদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্করা।

১১ আগস্টের পর টিকা ছাড়া মুভমেন্ট করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে এই শাস্তির বিধান করা হবে। টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। কারণ করোনা ঠেকাতে টিকাই শেষ সমাধান।