আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যোগ দিচ্ছে সুদান

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যোগ দিচ্ছে সুদান। এ লক্ষ্যে দেশটিতে হেগভিত্তিক আদালতের রোম নীতিমালায় যোগ দেয়ার খসড়া বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। গত মঙ্গলবার দেশটির কেবিনেটে বিষয়টি পাস হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদাক টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক আদালতে যোগ দেয়ার বিষয়টি সুদানের কেবিনেটে পাস হয়

আইসিসিতে সুদানের যোগদানের খসড়া চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলেও এটি আইনে পরিণত হতে এখনো দেরি আছে। প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদাক জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন কাউন্সিল ও মন্ত্রিসভার যৌথ বৈঠকের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। তবে কবে নাগাদ সে বৈঠক হবে তার জন্য কোনো সময়সীমার কথা উল্লেখ করেননি তিনি।

এর ফলে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে বিচারের মুখোমুখি করার সম্ভাবনা আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির

২০১৯ সালে সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটি পরিচালিত হচ্ছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে। এ সরকারকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু এবং বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ প্রশাসন সাবেক প্রেসিডেন্টের আমলে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জানা গেছে, আইসিসি দারফুর সংঘাতে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ওমর আল বশিরকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায়। ওই যুদ্ধে প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে আর বাস্তুচ্যুত হয় ২৫ লাখ মানুষ। ২০০৩ সালে নন-আরব বিদ্রোহীরা দারফুরে আরব আধিপত্যশীল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিলে এ সংঘাত শুরু হয়।

ওমর আল-বশিরের সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যাযাবর লোকদের নিয়ে গঠিত জাঞ্জাভিদ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিল, এই গোষ্ঠী ব্যাপকহারে ধর্ষণ, হত্যা, লুটপাট চালায় এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে জনপদ ধ্বংস করে দেয়।

তবে শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ওমর আল বশির। এর আগেও তাকে আইসিসির হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্নভাবে তিনি তা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি রাজধানী খার্তুমের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তার সাথে তার অনেক সহযোগীও রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আইসিসির অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দুর্নীতির দায়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হন। সেই সাথে ১৯৮৯ সালে যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই অভ্যুত্থানের বিষয়েও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে তার বিচার চলছে। সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন বশির ও তার সহযোগীদের বিচারের ব্যাপারে আইসিসির সাথে আলোচনা করেছে। তবে রোম নীতিমালায় অংশ না নেয়ায় তারা আইসিসির কাছে ওমর আল বশিরকে হস্তান্তর করতে পারছিল না।

গত মে মাসের শেষের দিকে, আইসিসির সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা দারফুর পরিদর্শন করেন এবং আল-বশিরসহ অন্য অভিযুক্ত নেতাদের হস্তান্তর করার জন্য সুদানের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ দেন।

আবদুল্লাহ হামদোক বলেন, আমরা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতাভিত্তিক নতুন সুদানের শক্ত একটি ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তবে এর ফলে আল বশির বা অন্য সুদানিদের ক্ষেত্রে কী অর্থ হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গত বছর, আলী কুশায়েব নামে জাঞ্জাভিদের এক নেতা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনিও আইসিসির মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ছিলেন।

আইসিসির বিচারকরা জুলাইয়ে বলেছিলেন, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের একাধিক মামলায় দারফুর সংঘাতের বিচার হওয়া মামলায় তিনি হবেন প্রথম সন্দেহভাজন আসামি।