করোনাকালেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪৭%, বেড়েছে মাথাপিছু আয়

চলমান বৈশ্বিক করোনা মহামারির সত্ত্বেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই জিডিপির আকার স্থিরমূল্যে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। একই সঙ্গে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২৪ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে আলোচ্য অর্থবছরে।

করোনাকালেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৪৭%, বেড়েছে মাথাপিছু আয়, ডলারের ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এই তথ্য প্রকাশ করেছে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৯ মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ সময়ের হিসাব কষে।

বিবিএসের মহাপরিচালক (ডিজি) তাজুল ইসলাম করোনাভাইরাসের মহামারির কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের পুরোটা সময় আমরা করোনার মহামারির মধ্যে ছিলাম। তার পরও ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে আমি খুবই ভালো অর্জন বলেই মনে করি।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রতীকী চিত্র

বিবিএসের ডিজি জানান, আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হবে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

অবশ্য আলোচ্য অর্থবছরের আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চূড়ান্ত হিসাবে বেশ খানিকটা কমে গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। ওই অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বলা হয়েছিল প্রাথমিক হিসাবে। তবে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত যে হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ওই অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি অর্জন ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

বিবিএস লোগো

চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির আকার স্থিরমূল্যে ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। বিবিএস প্রাথমিক হিসাবে জানিয়েছিল, ওই অর্থবছরে জিডিপির আকার ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিবিএস মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছি আমরা। প্রবৃদ্ধির হার কমে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব যে সব খাতেই পড়েছে, সেটা আমরা সবাই জানি। মূলত জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে কৃষি খাত, ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি খাতে চূড়ান্তভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ করোনা সংকটেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিল কৃষি খাত। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ০২ শতাংশ।

অন্যদিকে, করোনা সংকটেও খাদ্য শস্য, প্রাণিজ ও বনজ সম্পদ আহরণ ঠিক ছিল। কৃষির উপ-খাতের মধ্যে মৎস্য খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির ধস দেখা গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ফলে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, শিল্প খাতে করোনার বড় ধাক্কা লেগেছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ফাইল ছবি

এ ছাড়া করোনার বড় ধাক্কা লেগেছে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধিতেও। এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অথচ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, প্রবৃদ্ধি কমায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই জানি, এই প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হলো করোনার মহামারি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হিসাব এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবটা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। চূড়ান্ত হিসেবে এখন প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা বাস্তবতার কাছাকাছি।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, ফাইল ছবি

প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, করোনাকালে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই বিপর্যস্ত ছিল। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এই অর্জন সত্যিই প্রসংশনীয় বলে আমার মনে হয়েছে। সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য পরিকল্পনামন্ত্রী।

এদিকে, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জিডিপি প্রবৃদ্ধির চিত্র নিয়ে বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির চিত্র প্রকাশ করেছি আমরা। প্রবৃদ্ধি যে অনেকটা কমে গেছে, সেটা লুকানোর কিছু নেই। কারণ সঠিক চিত্র না এলে দেশের সঠিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না।