চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে যেভাবে সফল কাশ্মিরের তরুণ নারী উদ্যোক্তারা

কাশ্মিরের নতুন প্রজন্মের নারী উদ্যোক্তারা ব্যবসায়িক নানা সুযোগ কাজে লাগাতে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, লৈঙ্গিক সচেতনতার অভাবসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠছেন। এই উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই প্রযুক্তি সচেতন এবং কীভাবে সম্ভাব্য গ্রাহকদের টার্গেট করতে হয় তা ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছেন। এর ফলে তাদের ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসব নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- সানা ইমতিয়াজ হুসেইনি (২২) শ্রীনগরের উঁচু শহর থেকে আসা একজন ‘বেকার’। শ্রীনগর থেকে তিনিই প্রথম নারী যিনি ‘হোমবেকার্স ২০২০’ সালের তালিকায় দেশের সেরা ১০০ জন ‘হোম বেকারের’ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

দুই বোন ইকরা মুখতার (২৭)) ও বুশরা মুখতার (২৩) ঐতিহ্যবাহী কাশ্মিরি পোশাক সংরক্ষণের জন্য ২০১৮ সালে ‘কাশ্মিরি পেহনভা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ডা. গাজাল্লা আমিন ভেষজ ও ঔষধি পণ্য উৎপাদনকারী ফাসিয়াম এগ্রো ফার্মের মালিক। তিনি কাশ্মির চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রথম নারী সদস্যও ছিলেন। রিফাত মুশতাক কাশ্মিরের একজন প্রবীণ নারী উদ্যোক্তা। রিফাত একটি ম্যাচবক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশ করেন। তিনি জাকুরার শিল্প এলাকায় একটি কার্ডবোর্ড বক্স উৎপাদন ইউনিট এবং একটি ছাপাখানা চালান।

মাহিন রশিদ পণ্ডিত লাওয়াইপোরাতে অ্যামিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মালিক এবং স্কুলটি তিনি পরিচালনা করেন। জাহান পেটালস এবং ফার্নস উৎপাদনে রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগকারী। তিনি ফুলচাষে দুটি খামার চালান যেখানে তিনি দেশে ব্যবহার এবং রপ্তানির জন্য ফুল চাষ করেন। মাইমুনা নাজির শ্রীনগরের বুচপোরাতে ‘গেট ইন শেপ’ জিমনেশিয়ামের মালিক এবং সেটি পরিচালনা করেন।

দুই সন্তানের জননী রিফাত মাসউদি কাশ্মিরের একমাত্র নারী যিনি ব্যাট তৈরি করেন। তাকে প্রেরণা যোগায় তার পরিবার। বর্তমানে তার উৎপাদিত ব্যাট চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই এবং বেঙ্গালুরুতে সরবরাহ করা হয়।

নুসরাত জাহান উপত্যকার অন্যতম সফল নারী উদ্যোক্তা। তার ফুলের দোকান ‘চেইন অ্যান্ড ফার্ন’ রয়েছে। নুসরাত জাহান ২০০০ সালে তার নিজের ব্যবসার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি অন্য নারীদের জন্য রোল মডেল। এটি মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে। প্রথমদিকে তাকে বাইরে থেকে ফুল আমদানি করতে হতো। এখন তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল চাষ শুরু করেন।

মাইমুনা নাজির মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ জিম চালু করেছেন। তিনি এতে ভালো সাড়া পেয়েছেন। নতুন জিম সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে তার কর্ম পরিসর বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছেন।

মেহভিশ জার্গার আইনজীবী হয়ে ব্যবসায়ী হয়েছেন। তিনি শ্রীনগরের একটি ক্যাফের মালিক। ক্যাফের পরিবেশ এবং খাবারের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি। কাশ্মিরের চাকরিপ্রার্থী তরুণীদেরকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করছেন মেহভিশ জার্গার।

মধ্য কাশ্মিরের বডগাম জেলার বাসিন্দা জারকা তানজিল একটি ডিটারজেন্ট কারখানা স্থাপন করেন এবং ছয় ছেলে ও এক মেয়েসহ সাতজনের জীবিকা নির্বাহ করেন।

শ্রীনগরের পান্থা চকের ২৮ বছর বয়সী সায়মা নিসার শেখ দুধের ভেজালের বিরুদ্ধে লড়ছেন। প্রাথমিকভাবে সায়মা দুগ্ধ খামার শুরু করতে দুটি গরু কেনেন। তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য জম্মু ও কাশ্মির উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ঋণের জন্য আবেদন করেন।

২২ লাখ রূপি ঋণ পেয়েছেন তিনি। নিজের প্রায় তিন লাখ টাকা সঞ্চয়কে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। গরুর জন্য ঘর তৈরি করেছেন এবং ঋণের টাকা দিয়ে কিছু গরু কিনেছেন।

সায়মার পরিচালিত দুগ্ধ খামারটি খনমোহ শ্রীনগরে বিস্তৃত করেছেন। বর্তমানে সায়মা তার খামারে নয়টি গরু এবং ছয়টি বাছুর পালন করছেন। এর মধ্যে আটটি গরু দুধ দিচ্ছে। সায়মার খামারে প্রতিদিন প্রায় ৭০ লিটার দুধ উৎপন্ন হয় এবং গোবর সার বিক্রি করেন।

সূত্র: গ্রিক সিটি টাইমস