বিদায় টোকিও স্বাগত প্যারিস

প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়েই শেষ হলো ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ টোকিও অলিম্পিক। রোববার ভাঙল মিলন মেলা। ১৭ দিন আগে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে যে মশাল জ্বেলে পর্দা উঠেছিল টোকিও অলিম্পিকের আজ সেটা নামল। প্রায় তিন সপ্তাহের এই ক্রীড়াযজ্ঞে মীমাংসা হয়েছে ৩৩৯টি পদকের। টোকিও অলিম্পিকের বিদায়ের পর অপেক্ষা এখন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের।

জাপানের টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় ঢাউস মশাল নিভিয়ে হলো। আধুনিক অলিম্পিকের ৩২তম আসরের উদ্বোধনীতে মশাল জ্বেলেছিলেন প্রথম জাপানিজ হিসেবে টেনিসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা তারকা নওমি ওসাকা। গেমসের উদ্বোধন করেছিলেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো।

আজ সমাপনী অনুষ্ঠানে টোকিওর মেয়র ইউরিকো কোইকে পতাকা তুলে দেন আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখের হাতে। সেটা আবার টমাস তুলে দেন পরবর্তী গেমসের আয়োজক শহর প্যারিসের মেয়র আন হিদালগুর হাতে। বিদায়ী ভাষণে আইওসি সভাপতি বাখ ধন্যবাদ জানান টোকিও অলিম্পিকের আয়োজকদের।

সত্যিই ধন্যবাদটা প্রাপ্য টোকিও। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও শেষ পর্যন্ত গেমসটা সফলভাবে শেষ করতে পেরেছেন আয়োজকরা। তাতে তৃপ্ত টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাশিমোতো। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সব ক্রীড়াবিদ, কোচ ও স্বেচ্ছাসেবকদের। একই সঙ্গে প্যারিস অলিম্পিকের জন্য শুভ কামনা জানান তিনি।

টোকিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের ক্রীড়া সংস্কৃতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। আজ বিদায়ী অনুষ্ঠানে এবারের আসরের খণ্ড খণ্ড চিত্র, আনন্দ, বেদনা, উদযাপন তুলে আনা হয়। ভার্চুয়ালভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিশ্বের নানাপ্রান্তের ক্রীড়াবিদরা। সুরে-সঙ্গীতে আরো একবার বিশ্বকে নিজেদের সংস্কৃতির জানান দেয় জাপান।

এই অলিম্পিক আয়োজনের কথা ছিল গত বছর। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে তা পিছিয়ে যায় এক বছর। গেল মাসে এই আসর শুরু নিয়েও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিল অলিম্পিক কমিটি। শেষ অবধি সব বাধা পেরিয়ে জ্বেলে ওঠে আলোর মশাল। টানা ১৭ দিন জ্বলার পর তা নিভেও গেল।

মাঝের এই সময়টাতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৩৯টি ইভেন্টের স্বণপদক। কিন্তু হাই জাম্পে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ের পর কাতারের মুতাজ ইসা বারশিম ও ইতালির জিয়ানমার্কো তামবেরি যৌথভাবে জেতেন সোনার পদক। ফলে টোকিও অলিম্পিকে পদক বেড়ে হয় ৩৪০টি। অলিম্পিকের ১১৩ বছরের ইতিহাসে সোনার পদক ভাগাভাগির ঘটনা এবারই প্রথম।

১১৩টি পদক জিতে সেরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩৯টি সোনা, ৪১টি রুপা ও ৩৩টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন মার্কিন ক্রীড়াবিদরা। সবশেষ রিও অলিম্পিকেও তাদের দাপট ছিল। ৮৮টি পদক জিতে দ্বিতীয় হয়েছে চীন। রিওতে তৃতীয় হওয়া চাইনিজরা এবার ৩৮টি সোনা, ৩২টি রুপা ও ১৮টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন।

টোকিও অলিম্পিকে স্বাগতিক জাপান হয়েছে তৃতীয়। ২৭টি সোনা, ১৪টি রুপা ও ১৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ৫৮টি পদক জিতেছেন জাপানিজরা। বলা বাহুল্য, আসরে কোনো পদক পাননি বাংলাদেশিরা। যা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের কাছে অংশগ্রহণই বড় কথা। অলিম্পিকে সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়াই বাংলাদেশিদের জন্য বিরাট গর্বের।