গার্ডিয়ান: ব্রিটেনে হুমকির মুখে ‘পাকিস্তানিরা’

ব্রিটেনে নির্বাসিত পাকিস্তানিরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইউরোপিয়ান গোয়ান্দো সংস্থার কর্মকর্তারা। গার্ডিয়ানে রোববার (৮ আগস্ট) এ বিষয়ে একটি প্রতিদেবন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সমালোচনাকারী যারা ব্রিটেনে বসবাস করছেন তারা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর হুমকির মধ্যে রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ তাদের টার্গেট করে হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

দ্য ডনের খবরে বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা ইস্যুতে পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে। ব্রিটেনের মাটিতে বসে পাকিস্তানের সমালোচক নাগরিকদের নানা হেনস্থা করা হচ্ছে। অবশ্য দেশ ও বিদেশে পাকিস্তানের সমালোচনাকারীদের পরিণতি খারাপ হবে- এ বিষয়টি প্রথম উঠে আসে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধামন্ত্রী ইমরান খানের এক বক্তব্যে।

ইমরান খান ক্ষমতা গ্রহণের পর বলেছিলেন, পাকিস্তান সরকার তার সমালোচকদের দমন করবে, দেশে হোক আর দেশের বাইরে হোক। বলা হয়, ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আগের চেয়ে কমেছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে নেদারল্যান্ডে পাকিস্তানি রাজনীতিক কর্মী আহমাদ ওয়াক্কাস গোরায়া খুন হওয়ার দায়ে লন্ডনে এক ব্যক্তি অভিযুক্ত হয়। ৯০ দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানি রাজনীতি বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকাকেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই হত্যার হুমকি দেয়। এমনকি আয়েশা সিদ্দিকার স্বামীকেও চাপে রাখে।

এছাড়া ২০১৮ সালের লাহোরে অপহরণের শিকার হন বিশিষ্ট ইউটিউবার এবং কলামিস্ট গুল বুখারি। পরে তিনি লন্ডনে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি বলেছিলেন, পুলিশ তার বাড়ির ঠিকানা কাউকে শেয়ার না করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের নিযুক্ত ব্রিটেনের সাবেক হাইকমিশনার মার্ক লয়াল গ্রান্ট বলছেন, ব্রিটেনে যদি কারও ওপর বিশেষ করে সাংবাদিকদের ওপর কোনো অবৈধ চাপ থাকে, তাহলে আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে বা সরকারকে বলব অবশ্যই এই অবস্থার অবসান হওয়া উচিত। আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, যদি ব্রিটেনে অবস্থানকারী কোনো পাকিস্তানি তার দেশের সরকারের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়, তাহলে এ ব্যাপারে অবশ্যই কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী দ্য ডনকে বলেন, এসব অভিযোগ দুঃখজনক এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। পাকিস্তানের পুলিশের সন্ত্রাসী তালিকায় লন্ডনে অপরাধী থাকতেই পারে। অপরাধী ধরার ব্যাপারে পুলিশ তৎপরতা চালাতেই পারে।

তাই বলে সেটাকে ‌'হুমকি' বলা যায় না। এটা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আর পাকিস্তানে সাংবাদিকরা হুমকিতে নেই। গণমাধ্যম চাপের মধ্যে রয়েছে এরকম কােনো সিচুয়েশনই নেই পাকিস্তানে, যোগ করেন ফাওয়াদ চৌধুরী।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সত্য কথা হলো পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আগে থেকেই আছে, নানা নিষেধাজ্ঞা আছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ধুয়ো তুলে নতুন করে পাকিস্তানকে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে। মি. গোরায়া হত্যাকাণ্ডে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটা ব্যক্তিগত সমস্যা বা অপরাধ। এটা সরকারের কোনো বিষয় না।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন তাদের জরিপে পাকিস্তানকে ৫ম বিপজ্জনক দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ২০২০ সালে রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্সের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০ দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৫তম।