পিএসজিতে চাঁদের হাট

প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট। সে হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দলটি পা দিল ৫২ বছরে। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় পিএসজি এখনকার মতো সুখে কখনো ছিল কিনা, তা বলা মুশকিল। নেইমার, এমবাপ্পেকে নিয়ে গত কয়েক বছর খারাপ কাটেনি প্যারিসিয়ানদের। কিন্তু চাঁদের হাট বসানো বলতে যা বোঝায় তা হয়েছে আসলে এখনই, এবারেই।

তারকায় ভরা পিএসজির স্কোয়াড

গত কয়েক বছরে যতবারই দলবদলের ক্ষেত্রে মেসির নাম উঠেছে, ততবারই পিএসজির নাম উঠেছে অন্য দলগুলোর সাথে। কিন্তু ট্রান্সফার ফিসহ আনুষঙ্গিক দায় মেটাতে প্রয়োজন ছিল বিশাল অংকের অর্থের। ২০১৭ সালে ক্লাবটি নেইমারকে দিয়ে ঘর সাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে। সেদিনই পিএসজি বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজন হলে যে কোনো অংক খরচ করতে প্রস্তুত তারা। একই বছর সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ট্রান্সফার ফিতে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে কিনে নেয় পিএসজি। এরপর আরো কতজন! সবশেষ সংযুক্তি লিওনেল মেসি। যার ভবিষ্যত নিয়ে গত বছর রীতিমতো নাটক হয়ে গেল। ‘মেসি বিক্রির জন্য নয়’ কথাটি আবারো যেন প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু বছর ঘুরতেই সবকিছু পাল্টে গেল ভোজবাজির মতো। পিএসজির স্বপ্নযাত্রার সারথি এবার মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে দলে টেনে ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি স্বপ্নপূরণ করেছেন ভক্তদের। ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সা অধিনায়ক মেসি যোগ দেন প্যারিসিয়ানদের সঙ্গে। কিছুদিন আগে এভাবেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আসেন তাদের অধিনায়ক সার্জিও রামোস! এর আগে ও পরে ইন্টার মিলানের মরক্কান রাইট ব্যাক আশরাফ হাকিমি এবং ইতালিকে ইউরো জেতানো এসি মিলানের গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোন্নারুম্মাকে। আর নেইমার-এমবাপ্পেসহ অন্যরা তো বেশ ঝাঁকিয়েই আছেন। পিএসজিতে এখন চাঁদের হাট বসেছে বললে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। বর্তমান ক্লাব ফুটবল দুনিয়ায় এর চেয়ে তারাকাসমৃদ্ধ দল আর নেই।

পিএসজির ড্রেসিংরুমে মেসি

পিএসজিতে এখনো নাম্বার ওয়ান গোলকিপার হিসেবে আছেন কেইলর নাভাস। তবু ইতালিয়ান তরুণ তুর্কিকে উড়িয়ে আনা। এই মৌসুমটা পিএসজির গোলবার আগলে রাখার দায়িত্বটা দুজনেরই। বণ্টন প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবেন পিএসজির আর্জেন্টাইন কোচ মারিসিও পচেত্তিনো। কার্যত দুজনের কেউ ফেলনা নন। একজন রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়ে এসেছেন হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ। আর ডোন্নারুম্মা ২২ বছর বয়সেই ইতালির ইউরো জয়ের নায়ক।

পিএসজির রক্ষণভাগ নড়বড়ে হয়ে ওঠে গত মৌসুমে বিশ্বসেরা ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভাকে হারিয়ে। ব্রাজিলিয়ান তারকার শূন্যস্থান পিএসজি যে এভাবে পূরণ করবে সেটা ছিল কল্পনারও বাইরে। এই মৌসুমে পিএসজির রক্ষণ হয়ে উঠেছে তারুণ্য-অভিজ্ঞতার মিশেল। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও ইন্টার মিলানে দুই মৌসুম পার করে প্যারিসে এসেছেন আশরাফ। কদিন পর তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ইউরো-বিশ্বকাপজয়ী ডিফেন্ডার ও ক্লাব ফুটবলের সম্ভাব্য সবকিছু জয়ী স্প্যানিশ তারকা সার্জিও রামোস। আর আগে থেকেই আছেন ব্রাজিলের মার্কুইনহস ও ফ্রান্সের কিম্পেম্বে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় এখন পিএসজির মধ্যমাঠ। যেখানটা আগে থেকেই দাপিয়ে আসছেন ইতালির মার্কো ভেরাত্তি ও দুই আর্জেন্টাইন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, লিয়ান্দ্রো পারেদেস। আছেন ব্রাজিলের রাফিনহা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন প্রতিভা অ্যান্ডার হেরেরা। স্পেনের পাবলো সারাবিয়া ও জার্মান তারকা জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার। এই মৌসুমে তাদের সতীর্থ হয়েছেন ডাচ সেনসেশন জর্জিনিও ভিনালডাম। এবার এলেন বার্সেলোনার মহাতারকা মেসি। এখানে দুজনের আবার বিশেষত্ব আছে।

ভিনালডাম রক্ষণ, মাঝমাঠ এবং আক্রমণ তিন জায়গাতেই নড়াচড়ার মধ্যে থাকেন। মেসি মিডফিল্ডার হলেও আক্রমণের মূল ঢেউটা উঠবে তার মাধ্যমেই। মেসির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মাতামাতি হচ্ছে নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়ে। এই আক্রমণভাগ পৃথিবীর যে কোনো দেয়াল ভাঙতে সক্ষম। এমবাপ্পে ২০১৮ সাল থেকেই সময়ের অন্যতম সেরা তরুণ ফুটবলার। ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে তার বড় ভূমিকা ছিল। আছেন যুগের সেরাদের তালিকায় থাকা নেইমার। আর অন্য গ্রহের ফুটবলার খ্যাত লিওনেল মেসির জন্য আসলে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আক্রমণের সুরটা তিনিই বেঁধে দেবেন।

ভক্তরা তাদের দেখতে পাবেন মাঠে। কাগজে-কলমে নয়, মাঠের পারফরম্যান্সই কথা বলবে তাদের হয়ে। বিংশ শতাব্দীর সম্ভাব্য সেরা ফরওয়ার্ড লাইনআপের বিধ্বংসী পারফরম্যান্স দেখতে ভক্তদেরও যেন তর সইছে না। এই তো মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। প্রতীক্ষা ভয়ঙ্কর এক পিএসজিকে দেখার।