তুরস্কে ড্রোন প্রযুক্তি স্থানান্তর বন্ধ করতে চিঠি

আঙ্কারার মানবহীন বিমানবাহী (ইউএভি) অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের একটি দ্বিপক্ষীয় গ্রুপ। তুরস্কে আমেরিকান ড্রোন প্রযুক্তি স্থানান্তর স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে লেখা একটি চিঠিতে ২৭ জন কংগ্রেস সদস্য এ আবেদন জানান। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রদর্শনীতে তুর্কি ড্রোন

৯ আগস্ট লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তুরস্কের সশস্ত্র ইউএভি প্রোগ্রাম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে এবং মার্কিন স্বার্থ, মিত্র ও অংশীদারদের হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের শঙ্কার কথা তুলে ধরছি।

গত বছরের আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘর্ষের সময় নাগোরনো-কারাবাখ ছিটমহলে এবং সিরিয়া ও লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে তুর্কি ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি ছিল মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগের মূল কেন্দ্রবিন্দু। তারা তুরস্কের ড্রোনের যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকান সংস্থা এবং মার্কিনভিত্তিক বিদেশি কোম্পানির সহযোগী সংস্থাগুলোর সহযোগিতার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন। বিষয়টি তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রেসিডেন্সির বিরুদ্ধে আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত করার দাবি জানান তারা। আজারবাইজানে ব্যবহৃত বায়রাকতার ড্রোনগুলোতে মার্কিন নির্মিত কমপক্ষে ১০টি অংশ রয়েছে।

ড্রোন উদ্বোধন করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘর্ষে ইউএভি ব্যবহারের কারণে গত এপ্রিল মাসে তুরস্কে ড্রোন প্রযুক্তির রপ্তানি অনুমতি বাতিল করে কানাডা। তারা জানায়, বিষয়টি কানাডিয়ান পররাষ্ট্রনীতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

এদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক স্যামুয়েল রামানি বলেন, তুর্কি ড্রোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা মূলত তুরস্কের নিজস্ব সামরিক পদক্ষেপের সাথে সম্পর্কিত। এই নীতির কারণে রাশিয়া থেকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম এবং এস-৪০০ (মিসাইল সিস্টেম) কেনার ব্যাপারে স্বাধীনতা পায় দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ।

রামানি উল্লেখ করেছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের চিঠিটি একটি হতাশার প্রতিনিধিত্ব করলেও ড্রোন ব্যবহারের কারণে আঙ্কারার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সম্ভাবনা কম।

তিনি বলেন, এই বিষয়গুলোর জন্য মার্কিন-তুরস্ক সম্পর্কের ঝুঁকি নেবে না বর্তমান প্রশাসন। কারণ বর্তমান অবস্থায় তুরস্ক যা করেছে বা করছে তার চেয়ে লিবিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসে রাশিয়ার আচরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, মরক্কোর মতো দেশ মার্কিন ও তুর্কি উভয় ধরনের ড্রোন দিয়ে তাদের সামরিক বাহিনীকে উন্নত করে তুলতে চায়। আবার ইউক্রেনের কাছেও তুর্কি ড্রোন প্রযুক্তি রয়েছে। এ অবস্থায় আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা জারি করা বা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা মার্কিন স্বার্থের জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, তুর্কি ড্রোনগুলোর ব্যাপারে বলা হচ্ছে, ড্রোনগুলো হুমকি মোকাবেলার পরিবর্তে আক্রমণাত্মকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা এবং তারা বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করছে কিনা। যদি এই দুটি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে তুরস্ককে তার ড্রোন ব্যবহারে লাগাম টানতে হবে। অন্যথায় তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

তুর্কি কর্তৃপক্ষ এখনো বিতর্কিত এ চিঠির বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।