ইমরান: বাইডেনের ফোনের অপেক্ষায় বসে নেই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফোনকলের জন্য সত্যি সত্যিই অপেক্ষা করছেন না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত বুধবার রাতে বিদেশি সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘ সময়ের আলোচনার এক পর্যায়ে এ কথা বলেন তিনি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ফাইল ছবি

রয়টার্সের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, শুনতে পাচ্ছি, অনেকে বলছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমাকে ফোন করেনি। এটা তার ব্যাপার। কিন্তু আমি তো এ ধরনের ফোনের জন্য বসে নেই।

এর কয়েকদিন আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুয়ীদ ইউসুফ বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি এভাবে দেশের (পাকিস্তানের) নেতৃত্বকে অবহেলা করতে থাকেন তাহলে পাকিস্তানের হাতে অন্য বিকল্প আছে।

জো বাইডেন ও ইমরান খান, ফাইল ছবি

তিনি আরো বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বলেছিল, আফগানিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র খুবই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। আমাদের প্রতিবারই বলা হয় (ফোন) করা হবে। কিন্তু সত্যি বলতে কি মানুষ এখন আর এগুলো বিশ্বাস করে না। ফোন কল, নিরাপত্তা ইস্যুসহ কিছুতেই যদি এমন ছাড় হয়, তাহলে পাকিস্তানের হাতে কিন্তু বিকল্প আছে।

বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ইমরান খান আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি, পাকিস্তানের ওপর এর প্রভাব এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, মার্কিনিরা তাড়াহুড়ো করে আফগানিস্তান থেকে চলে গেছে। তারা যদি সেখানে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চায়, তাহলে কমনসেন্স এটাই বলে যে, (আপনি আলোচনা করুন) শক্তির অবস্থান থেকে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করে চলে গেছে, আর এখন দোষ দিচ্ছে পাকিস্তানকে।

ইমরান বলেন, আমরা মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ভারতই তাদের কৌশলগত অংশীদার। হয়তো সে কারণেই পাকিস্তানের সাথে অন্যরকম আচরণ করা হচ্ছে। শুধু পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেই পাকিস্তানকে উপকারী বলে মনে করা হয়।

এ সময় তিনি স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের মনোভাবেই কারণেই চীনের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে।

পাকিস্তানের বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় পাক প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, আফগান পরিস্থিতির অবনতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা পাকিস্তানের।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি আপনারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন কি না? উত্তরে বলবো, হ্যাঁ, আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ, সেখানে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আফগানিস্তানের পরে যে দেশটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটি হচ্ছে পাকিস্তান। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, তালেবান পাখতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী। আর সে কারণে পাকিস্তানের পাখতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় অবশ্যম্ভাবী এর প্রভাব পড়বে।

আরো বলেন, ২০০৩-০৪ সালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করায় আমাদের ৭০ হাজার লোককে আমরা হারিয়েছি। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আমাদের পাখতুন এলাকায় আবারো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাকিস্তানের প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ আদিবাসী এলাকা থেকে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি সেরে উঠছে। এ অবস্থায় আমরা শরণার্থীদের আরেকটি প্রবাহ চাই না।