সায়গনের মতোই কাবুলে অবমাননাকর প্রস্থান যুক্তরাষ্ট্রের!

পেন্টাগনে নাইন ইলেভেন হামলার ২০ বছুর পূর্তির সময়ে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কঠোর সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনিয়র রিপাবলিক্যান সদস্য মিচ ম্যাককনেল। যদিও বাইডেনের পূর্বসুরি ডোনাল্ড ট্রাম্প সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। গার্ডিয়ান।

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সিনিয়র রিপাবলিক্যান সদস্য মিচ ম্যাককনেল

ম্যাককনেল বলছেন, আফগানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হামলা ও দূতাবাস কর্মকতাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের খবর কাবুলের পতনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাইডেনের সিদ্ধান্ত ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনামের সায়গন পতনের অবমাননাকর ঘটনার কথা করিয়ে দেয়। তিনি আফগান সরকারি বাহিনীকে আরও বেশি সামরিক সহয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাইডেন দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়ে যুদ্ধ থামানোর যে কথা বলছেন, সেটা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়।

ম্যাককনেল বলছেন, বাইডেন যদি সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত না বদলান, তাহলে কাবুলে মার্কিন দূতাবাস জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নাইন ইলেভেন হামলার ২০ বছরপূর্তি আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবে আল কায়েদা ও তালেবান।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অবমাননাকর পরিস্থিতির শিকার হবে তা আগে থেকেই জানত।

শুক্রবার আফগানের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শহর কান্দাহারের পতন ঘটেছে। পাশাপাশি দক্ষিণের লস্করগাহেরও পতন হয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম শহর পশ্চিমের হেরাত এবং উত্তর-পূর্বের কালা ই নাও এখন তালেবানের দখলে।

ম্যাককনেলের বক্তব্য সমর্থন করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক মুখপাত্র মরগ্যান ওরতেগাস বলছেন, আফগানি মার্কিন পলিসির ব্যাপক ব্যর্থতা প্রমাণিত হল। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরাজয় নতুন প্রজন্মের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এই পরাজয় যুক্তরাষ্ট্রের সব সেক্টরে ধস নামার অবস্থা সৃষ্টি করবে।

তবে বাইডেন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে এখনও অনড় রয়েছেন। গত ১০ আগস্ট তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অনুশোচনায় ভুগছেন না। আফগানের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে এবং হাজার হাজার সেনা সদস্যকে হারিয়েছে।

তবে আফগান সরকারি বাহিনীকে বিমান হামলা, খাদ্য ও অস্ত্র-সরঞ্জামের সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

গত জুনে যখন তালেবান একের পর এক এলাকা দখল করছিল, তখনও বাইডেন সাইগন পরিস্থিতির ব্যাপারটা তুলেছিলেন তার বক্তব্যে। তবে তিনি বলেছিলেন, সায়গনের মতো আফগানে এমন পরিস্থিতি হবে না যে, তালেবানের ভয়ে মার্কিন দূতাবাসের ছাদ থেকে কর্মকর্তাদের তুলে নিয়ে যেতে হবে।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ মার্ক মিলি সায়গনের মতো অবমাননাকর প্রস্থানের সঙ্গে কাবুলকে তুলনা করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন।

মিলি বলেছিলেন, আমাকে অনেকেই ভুল বুঝতে পারেন, তবে আমি আফগানিস্তানে সায়গন পরিস্থিতি দেখছি না। তালেবান উত্তর ভিয়েতনামের সেনাবাহিনী নয়, আর আফগানের পরিস্থিতিও সেরকম নয়।

খবরে বলা হয়, কাবুল থেকে মার্কিন দূতাবাস খালি করার সময় কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় থাকবে তিন হাজার মার্কিন সেনা। প্রযুুক্তিগত ও লজিস্টিক সাপোর্টেল জন্য কাতারে থাকবে এক হাজার সেনা এবং প্রয়োজন হলে কুয়েতে আরও তিন থেকে চার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে কথা বলেছেন এক মার্কিন সিনিয়র কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্র আফগান সেনাবাহিনীকে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সহায়তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষযটি ঘানিকে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।