ডায়াবেটিস: কোভিডের পর ভারতে নতুন শঙ্কা

ভারতে তিন কোটি বিশ লাখের বেশি মানুষের করোনা বা কোভিড ১৯-এ শনাক্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ২৯ হাজার ৭০২ জনের। এর মধ্যে হঠাৎ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আক্রমণে অনেক করোনা রোগী মারা গেছেন। অনেকের অঙ্গহানিও হয়েছে। এবার আরেক শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে। করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেহে চিনির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। বিবিসি।

করোনার পর ডায়াবেটিসের হার নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকেরা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টেরয়েড কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে সর্বশক্তি ব্যবহার করে, তখন শরীরেরও কিছুটা ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি কমাতে অনেক ক্ষেত্রে দেয়া হয় স্টেরয়েড। কিন্তু এই স্টেরয়েডই আবার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের একটি বড় অংশ নতুন করে পুরোপুরি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অশনাক্ত অবস্থায় থেকে গেলে বা চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের সমস্যা, চুল পড়ে যাওয়া কিংবা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরও ক্ষতি হতে পারে।

মুম্বাইভিত্তিক ডায়াবেটোলজিস্ট ড. রাহুল বকশি বলেন, দুশ্চিন্তার বিষয়টি হচ্ছে, করোনা মহামারি পার হওয়ার পর ভারতে ডায়াবেটিসের একটি সুনামি দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, এখন যারা চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাদের ৮ থেকে ১০ শতাংশের আগে ডায়াবেটিসের কোনো ইতিহাস ছিল না। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তা থেকে সেরে ওঠার পর এখন তাদের ধারাবাহিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ খেতে হচ্ছে।

তবে চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্টেরয়েডই এই কোভিড পরবর্তী ডায়াবেটিসের মূল কারণ, নাকি এক্ষেত্রে কোভিডেরও সরাসরি কোনো ভূমিকা আছে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১২৭ জন রোগীর মধ্যে ১০ শতাংশের দেহে নতুন করে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, যাদের আগে এ রোগ ছিল না। তাদের বয়সের গড় ৩৬ বছর।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ১৩ জনের মধ্যে ৭ জনকে কোভিড চিকিৎসার সময় কোনো ধরনের স্টেরয়েড বা বাড়তি অক্সিজেন দিতে হয়নি। অথচ এসব রোগীর রক্তে যে পরিমাণে সুগার পাওয়া যাচ্ছে তা গবেষকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারা বলেন, সামনের বছরগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে পারে।

দিল্লি ও চেন্নাইয়ের দুটি হাসপাতালে ৫৫৫ জন রোগীর ওপর পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর যারা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিয়েছিলেন, তাদের ব্ল্যাডে সুগারের মাত্রা, যাদের ডায়াবেটিসের আগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের চেয়ে বেশি।

ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক গাই রুটারের মতে, করোনাভাইরাস দেহের যেসব অঙ্গকে আক্রমণ করে, তার একটি হল অগ্ন্যাশয়। যাদের ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় আক্রান্ত হয়েছে, তাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়াও বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে কোভিড থেকে সেরে ওঠা এ ধরনের রোগীদের ডায়াবেটিস স্থায়ী হয়ে যাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে।

মূলত অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিনের সহায়তায় মানবদেহের কোষ রক্ত থেকে গ্লুকোজ নেয়, যা শক্তি তৈরির জন্য ব্যবহার হয়। কিন্তু অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে, তাহলে কোষ আর সেই গ্লুকোজ নিতে পারে না, ফলে রক্তে চিনি বা শর্করার আধিক্য তৈরি হয়। এ জটিলতাকে বলে ডায়াবেটিস। ভারতে বর্তমানে প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা চীনের পর বিশ্বে সর্বোচ্চ। চীনে এ সংখ্যা ১১ কোটি ৬০ লাখ।