গাদ্দাফি-ফয়সালের যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেন ১৯৭৩ সালে। আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের ফাঁকে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে বৈঠক করেন তিনি। তাদের মধ্যে ছিলেন লিবিয়ার লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজও।

বাঁ থেকে মুয়াম্মার গাদ্দাফি, শেখ মুজিবুর রহমান ও ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ, ফাইল ছবি

আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রভাবশালী নেতা তখন প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ করার। তাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যুক্তি দিয়ে তুলে ধরেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা। ওই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় বিশিষ্ট সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুলের ‘মুজিবের রক্তে লাল’ গ্রন্থে। বাংলাদেশ বেতারের তৎকালীন এই মহাপরিচালক বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন ওই সম্মেলনে।

পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী গাদ্দাফির কটেজে হাজির হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাদের মধ্যে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি আলোচনা ওঠে বিশ্বরাজনীতি নিয়ে। এ সময় আকস্মিকভাবে দোভাষীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে একটি প্রস্তাব দেন গাদ্দাফি। আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব করার আগ্রহ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব নিতে পারি আর আপনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর নেতৃত্ব দিন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সমর্থন দিবো আমরা। তবে সবার আগে বাংলাদেশের নাম বদলে ‘বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ করতে হবে।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও শেখ মুজিবুর রহমান, ফাইল ছবি

এর জবাবে বিনয়ের সঙ্গে প্রস্তাবটি ‘অত্যন্ত উত্তম ও সুচিন্তিত’ উল্লেখ করে এই মুহূর্তে সেটি কার্যকর করা সম্ভব নয় জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আপনার লিবিয়ায় অমুসলিম জনসংখ্যা নেই বললেই চলে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি অমুসলিম রয়েছেন। মহান আল্লাহ কেবল আল-মুসলেমিন নন, রাব্বুল আলামিনও; সবকিছুর স্রষ্টা ও মহান তিনি।

এদিকে, আলজেরিয়ায় সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ জানান বঙ্গবন্ধু। জবাবে বাদশাহ ফয়সাল বলেন, সৌদি স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নাম পাল্টে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ রাখতে হবে।

শেখ মুজিবুর রহমান ও ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ, ফাইল ছবি

এর উত্তরে দেশের এক কোটি অমুসলিম জনসংখ্যার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, সবাই মিলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করে, দুর্ভোগ সহ্য করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তাছাড়া আল্লাহ তো কেবল আল-মুসলেমিন নন, রাব্বুল আলামিনও তিনি। তিনি মুসলমানদের আল্লাহ নন, সবকিছুর অধিকর্তা এবং একমাত্র স্রষ্টা তিনি। আপনাদের দেশের নাম কিন্তু ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি অ্যারাবিয়া নয়, কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়া। এ নিয়ে তো কেউই আপত্তি করিনি আমরা!