তালেবানকে নিয়ে উভয় সংকটে ভারত

তালেবান সম্প্রতি বৃহৎ পরিসের প্রথম আলোচনায় আসে গত ৬ আগস্ট। সেদিন তারা দেশের প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী জারাঞ্জ দখলে নিয়েছিল। এর ১০ দিনের মধ্যে তারা কাবুলসহ দেশের প্রায় সবগুলো প্রদেশে নিজেদের দখল কার্যকর করেছে। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। আলোচনা করছে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার হবে, না সরাসরি সরকার। ভূ-রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ  এই দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে বড় ধরনের অস্বস্তিতে পড়েছে ভারত। খবর দ্য হিন্দু।

তালেবান প্রশ্নে এ মুহূর্তে অস্বস্তিতে আছে ভারত

প্রথমদিকে পশ্চিমা বিশ্ব তালেবানের এই অগ্রগতি দেখে ঘোষণা দিয়েছিল, সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসা কোনো শক্তিকে বা সরকারকে তারা স্বীকৃতি দেবে না। এই ঘোষক দলের অন্যতম ছিল ভারত। কিন্তু কাবুল এবং তারও আগে জালালাবাদ ও মাজার-ই-শরীফ দখলের ক্ষেত্রে তালেবানকে কোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়নি। এর আগের প্রদেশগুলোতেও তেমন কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়াই সেগুলো নিজেদের করায়ত্তে নিয়েছিল তালেবান।

নতুন এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে ঘোষণা দেয়া ওই সব দেশ, বিশেষ করে ভারত। কারণ একেবারে লাগোয়া না হলেও প্রতিবেশী দেশই বলা যায় আফগানিস্তানকে। সেখানে রয়েছে বাণিজ্যের প্রচুর সুযোগ। সে কারণে বিগত বছরগুলোতে বড় অংকের বিনিয়োগও করেছে ভারত। আবার সেখানে ভারতের প্রচুর মানুষ কাজ করে। আর ভূ-কৌশলগত দিক দিয়ে আফগানিস্তানকে অস্বীকার করার মতো কোনো বিকল্প নেই ভারতের হাতে।

আফগান-ভারত সম্পর্কের অর্থমূল্যও নেহায়েত কম নয়

আবার চীন, পাকিস্তানের মতো ভারতের শত্রু রাষ্ট্রগুলো প্রথম থেকেই তালেবানকে সমর্থন দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে ফেলেছে। এ অবস্থায় ভারত পড়েছে উভয় সংকটে। তাই রোববার তালেবান কাবুল দখল করে নিলেও এ পর্যন্ত ভারতের কোনো কর্তৃপক্ষ মুখ খুলেনি। হ্যাঁ-না বা ভালো-মন্দ কোনো কিছুই বলেনি।

অন্যদিকে ভারত এ মুহূর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিও। ফলে সেখানে আফগানিস্তান নিয়ে যেসব বৈঠক ডাকা হবে, তাতে নিষ্ক্রিয় থাকার কোনো সুযোগ নেই ভারত তথা নরেন্দ্র মোদি সরকারের। আর নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মোদি সরকারের দেয়া সিদ্ধান্ত বা মতের ওপর দিয়ে ভারত-আফগানিস্তানের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা হবে।

এদিকে ভারত তালেবানের ব্যাপারে কোনো কিছু না বললেও তারা কিন্তু ইতোমধ্যেই ভারতের ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট কথা উচ্চারণ করেছে। বিগত দিনে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য তারা যেমন নয়াদিল্লির প্রশংসা করেছে, তেমনি আফগানিস্তানে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপের ব্যাপারেও সাবধান করে দিয়েছে।

এখন সেখানে যে পরিস্থিতি, তাতে বিশ্বের কোনো দেশই সেখানে অস্ত্র বা শক্তি প্রয়োগের ন্যূনতম চিন্তাও মাথায় আনছে না। ফলে ভারত এমনিতেই সে পথে হাঁটতে পারবে না। বাকি থাকা কূটনীতির প্রশ্নে ভারত তালেবানের সাথে কতটুকু সুবিধা করতে পারে তা দেখতে সময়ের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।