কোনো একটি নির্দিষ্ট ফুটবলারের এক ক্লাবের হয়ে এত সাফল্য আর নেই। লিওনেল মেসি যা করে গেছেন বার্সেলোনার জন্য তার বিশেষণ এক কথায় হতে পারে অতুলনীয়। প্রায় দেড় যুগের অধ্যায়ে মেসি খেলেছেন ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ। করেছেন সর্বোচ্চ গোল। কাতালানদের প্রায়সব রেকর্ড এই আর্জেন্টাইন জাদুকরের দখলে। মেসির জাদুকরি পারফরম্যান্সে কাতালানরা দুবার জিতেছে ত্রিমুকুট।

messi laporta bartomeu barcaহুয়ান লাপোর্তা

ন্যু ক্যাম্প থেকে ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলারের প্রস্থান হয়েছে কিছুদিন হবে। কাতালানদের সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময়ের সম্পর্কের ইতি টেনে সম্প্রতি প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছেন মেসি। এখানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি হয়েছে তার। এক বছর বর্ধিত চুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। মেসি আসায় উৎসব নেমে এসেছে ফরাসি ফুটবলে। আর মাতম চলছে স্প্যানিশ ফুটবলজুড়ে।

মেসি অবশ্য এক বছর আগেও চলে যেতে চেয়েছিলেন। ব্যুরো ফ্যাক্সে স্প্যানিশ ক্লাবটিকে জানিয়ে দেন বার্সায় আর থাকতে চাচ্ছেন না তিনি। তবু রিলিজ ক্লজের মারপ্যাচে আরো এক মৌসুম ন্যু ক্যাম্পে থাকতে হয়েছে তাকে। এই এক বছরে কাতালানদের পরিচালনা পর্ষদে বড় একটা পরিবর্তন এসেছে। সরে যেতে হয়েছে বার্সেলোনা সভাপতি হোসেপ মারিয়া বার্তেমিউকে।

অনেকের ধারণা মেসির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে চেয়ার ছাড়তে হয়েছে তাকে। বার্তেমিউর শূন্যস্থানে এসেছেন ক্লাবেরই সাবেক সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা। শেষ দিকে সাবেক সভাপতির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক যদি শীতল হয়ে থাকে তাহলে লাপোর্তার সঙ্গে সম্পর্কটা উষ্ণ। এই উষ্ণতা মেসি ও বার্সার নতুন চুক্তির সম্ভাবনা এগিয়ে নেয় অনেকদূর। যেই মেসি বার্সায় থাকবেন না বলে এক বছর আগে সিদ্ধান্ত দেন সেই তিনিই লাপোর্তার প্রভাবে তা পাল্টান।

গত ৩০ জুন বার্সেলোনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে মেসির। তবে ৫ জুলাই পর্যন্ত তা ঝুলে ছিল। স্প্যানিশ ফুটবলে পেন্ডুলামের মতো দুলছিল মেসির ভবিষ্যত। যদিও লাপোর্তা মেসিকে ধরে রাখার ব্যাপারে বরাবরই আশাবাদী ছিলেন। আশার কথা শুনিয়েছেন সবসময়। মেসিকে শেষ পর্যন্ত রাজিও করিয়েছেন তিনি। ফুটবল দুনিয়া বার্সা-মেসির নতুন চুক্তির অপেক্ষায় ছিল।

এরপরই এল বিস্ফোরক খবরটা। বার্সেলোনার ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হলো মেসি আর থাকছেন না। খবরটা শুনে হচকচিয়ে উঠল ফুটবল দুনিয়া। শুরু হলো শোরগোল। টানা পাঁচ দিনের ঝড় ক্লাব ফুটবলে আনল বড় ধরনের পরিবর্তন। কাতালান ছেড়ে মেসি চলে গেছেন প্যারিসে। প্রশ্ন জাগে সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও কেন বহুল আলোচিত চুক্তিটা হলো না। ঝামেলাটা কোথায় ছিল?

১০ দিন আগে লাপোর্তা খোলাসা করেছেন ব্যাপারটা। লা লিগার ‘ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নীতির কারণে চুক্তি নবায়ন হয়নি। বার্সা খেলোয়াড়দের বর্তমান যা বেতন তা তাদের আয়ের চেয়েও ১০ শতাংশ বেশি। মেসিকে রাখতে হলে মোট বেতনের পরিমাণ আরো বাড়বে। মেসি অবশ্য অর্ধেক বেতনে খেলতে রাজি ছিলেন। তাতেও সমস্যার সমাধান হবে না। সমাধান একটা ছিল, সেটা একটু পরই না হয় আলোচনা করা গেল।

বার্তেমিউ চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেন লাপোর্তা। পুরনো চেয়ারে নতুন করে ফিরেই দেখেন ক্লাবের দুরবস্থা। যা তার ভাবনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাবের আর্থিক এমন শোচনীয় অবস্থার বিষয়টি মাথায় রেখেই মেসির বিষয়ে সবসময় ইতিবাচক ছিলেন তিনি। কিন্তু একটা ঝামেলা যে মৌসুমের শেষ দিকে হবে তা লাপোর্তার মতো পরিণত ফুটবল সংগঠক অনুমান করতে পারেননি এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যেই বার্সা দলে টেনেছে মেম্ফিস ডিপেই, সার্জিও অ্যাগুয়েরো, রয়াল এমারসন ও এরিক গার্সিয়াকে। চারজনের বেতনই চড়া। যা ‘গরীব’ হয়ে যাওয়া বার্সার জন্য এক প্রকার বিলাসিতা। এই বিলাসিতা এমন একটা সমীকরণে গিয়ে বার্সাকে দাঁড় করিয়েছে যে মেসি অর্ধেক বেতনে থেকে যেতে রাজি হলেও ‘ফিনান্সিয়ার ফেয়ার প্লে’ নীতিটা ঠিক থাকে না। শেষ পর্যন্ত এই নীতির বলি হলো মেসি-বার্সা নতুন চুক্তি।

বার্সেলোনা জেনে-বুঝেই যে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে তা বুঝতে ফুটবলের মহাপন্ডিত হতে হয় না। এমন না যে গত ৫ জুলাই স্প্যানিশ লা লিগার আর্থিক জটিলতার বিষয়টা প্রথম জেনেছেন লাপোর্তা। আসলে তিনি জানতেন তা অনেক আগে থেকেই। এ কারণে মৌসুমের শেষ দিকে অনেক ফুটবলার বার্সা ছেড়ে দিয়েছে বেতনের লাগাম টানতে। তাতেও ঘাটতি মেটেনি।

বার্সা সভাপতি শরণাপন্ন হন লা লিগা প্রেসিডেন্ট হ্যাবিয়ের টিবাসের কাছে। তার কাছেই ছিল সমাধান। মেসিকে ধরে রাখতে টিবাস লাপোর্তাকে দিলেন বড় ধরনের এক ‘টোপ’। যা গিললে আর্থিক দুরবস্থা যেমন দূর হতো তেমনি ধরে রাখা যেতো আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে। সে জন্য দরকার ছিল লাপোর্তার একটা সই। তা হচ্ছে লা লিগা-সিভিসি ক্যাপিটালসের চুক্তিতে একমত হওয়া।

লাপোর্তা দ্বিমত পোষণ করেছেন বিতর্কিত এই চুক্তিতে। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেসিকে ছেড়ে দেওয়ার। এই চুক্তি হওয়া মানেই ক্লাবকে ক্ষতিগ্রস্থ করা। লাপোর্তা সেটা চাননি। চাননি বলেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মেসি বিশ্বসেরা ফুটবলার। কিন্তু সবার ঊর্ধ্বে ক্লাব। আমি ক্লাবের ধ্বংসের পথ বেছে নিতে পারি না।’ শেষ দুটি বাক্য অবশ্য চিরন্তন সত্য। এবং এটাই হয়ে থাকে।

মেসিকে ধরে রাখলে ভবিষ্যতের অডিটে বড় বিপদে পরে যেত বার্সা। খেসারত দিতে হতো বড় ধরনের। তাই জেনে-শুনে বিষপান করেননি লাপোর্তা। মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি এবং লা-লিগা সিভিসি দুটো চুক্তিই কাতালানদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় উভয় সংকটের। লাপোর্তা তথা বার্সা হাঁটল না কোনো পথেই। লাপোর্তা ‘জোট’ বাঁধেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে। তাদের আরেকজন সঙ্গী হচ্ছে জুভেন্টাস সভাপতি।

এই ত্রয়ী মিলে বিতর্কিত আরেক টুর্নামেন্ট ‘ইউরোপিয়ান সুপার লিগ’ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা নয়টি ক্লাব অবশ্য প্রবল চাপের মুখে এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বার্সা-রিয়াল-জুভেন্টাস সিদ্ধান্তে অটল থাকে। স্প্যানিশ ক্রীড়ামাধ্যমগুলো এমন খবরও প্রচার করেছে যে, মেসির ন্যু ক্যাম্পে শেষ সংবাদ সম্মেলনের দিন ওই তিনটি ক্লাবের প্রধান বৈঠক করেছেন একুট রেস্টুরেন্টে!

মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি নিয়ে লাপোর্তা পড়েছিলেন মহাবিপদে। ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা। বার্সা সভাপতি হারিয়েছেন দুই কূলই। মেসি ও বার্সা ভক্তদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন খলনায়ক, বিশ্বাসঘাতক। আসলেই কি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন লাপোর্তা? নাকি প্রতিশোধ নিয়েছেন মেসির ওপর? এক বছর আগে ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মেসি যে বার্সাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন সেটার প্রতিশোধটাই কি মোক্ষম সময়ে নিয়েছেন লাপোর্তা?

প্রশ্নগুলো থাকছেই। উত্তর একদিন আসতে পারে। সামগ্রিক বিষয় কিন্তু দুই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হতে পারে বার্সা ইচ্ছে করেই মেসিকে ছেড়ে দিয়েছে। বেতন সংক্রান্ত ভবিষ্যত আর্থিক জটিলতার বিষয়টা জেনেও কেন অ্যাগুয়েরো, ডিপেই, এমারসন, গার্সিয়ার মতো ফুটবলারদের দলে টেনেছিল বার্সা? মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তিকে কেন অগ্রাধিকার দেওয়া হলে না ওই চারজনকে নেওয়ার আগে?

এক্ষেত্রে বোধহয় কিছুটা সংশয়ে ছিল বার্সেলোনা তথা লাপোর্তা। যদি শেষ পর্যন্ত মেসি ন্যু ক্যাম্পে থাকতে রাজি না হন! তাহলে তো দলের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে যাবে। এই ভয়েই সম্ভবত আগেভাগে দল গুছিয়েছেন লাপোর্তা। এরপর মেসিকে হয়তো একটা উপায়ে রাখাই যাবে। সেই উপায়টাও বার্সা সভাপতি পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু লা লিগা প্রধান টিবাসের ওই শর্তে রাজি হয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারেননি লাপোর্তা।

লা লিগা-সিভিসি চুক্তির বিরোধিতা করেছে রিয়াল মাদ্রিদও। রিয়াল-বার্সার সঙ্গে বড় দলগুলোর মধ্যে সেভিয়া চুক্তির বিরোধিতা করেছে। আরেকটি দ্বিতীয় সারির ক্লাব আছে তাদের সঙ্গী। লা লিগা-সিভিসি চুক্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত করা হলো ভোটাভুটি। যেখানে নিরঙ্কুশ ভোট পেয়ে চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্পেনের ৩৮টি ক্লাব চায় চুক্তি হোক। চারটি ক্লাব চায়নি। তাতেও বোধহয় আটকাচ্ছে না চুক্তি।

২৭০ কোটি ইউরোর বদলে সিভিসি ক্যাপিটালস এখন লা লিগাকে দেবে ২১০ কোটি। বিরোধিতা করা চারটি ক্লাবের টিভিস্বত্ব ৫০ বছর তাদের দখলেই থাকবে। চুক্তি হয়ে গেলে মার্কিন আর্থিক সংস্থাটি আগামী অর্ধ শতাব্দী লা লিগার লভ্যাংশের ১০ শতাংশ নেবে। এটা অবশ্য বসে বসে দেখতে রাজি নয় রিয়াল মাদ্রিদ। ক্লাব প্রেসিডেন্ট পেরেজ লা লিগা ও সিভিসি প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন।

রিয়াল-বার্সার পেছনে আছে স্প্যানিশ রয়্যাল ফুটবল ফেডারেশন। স্প্যানিশ ফটবলে দুটো বিষয়ই এখনো আলোচনার শীর্ষে। আর মেসি? হ্যাঁ, ২১ বছর পর ঘর হয়েছে তার পর। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মানসিক সেই ধাক্কা সামলে উঠতে দ্রুতই নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন মেসি। স্বপ্ন দেখছেন প্যারিস অধ্যায় উপভোগ করতে, ‘আমরা পাঁচজনই খুব খুশি থাকব এবং এই ক্লাবে আমরা সময়টা উপভোগ করব।’

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.