শর্ত মানলে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিবে যুক্তরাষ্ট্র!

আফগানে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে শর্তারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মানবাধিকার বিশেষ করে নারীর অধিকার রক্ষার ব্যাপারে তালেবানের আচরণে পরিবর্তন না এলে ওয়াশিংটন তালেবান সরকারকে তারা স্বীকৃতি দেবে না।

নেড প্রাইস

সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে এসব শর্তের কথা বলা হয়। দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, তালেবান কাবুল দখল করার পর আমরা তীব্রভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দেশের রাজধানী কিংবা কাবুলে তালেবান কোনো ধরনের সহিংসতা চালায় কিনা কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রাইস বলছেন, আমরা তালেবান সরকারের সঙ্গে কাজ করব তবে তালেবানকে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ভবিষ্যতের আফগান সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে কিনা তা আমরা দেখব।

তালেবান

তালেবান সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালে কিংবা মানাবাধিকার লঙ্ঘন করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দেবে না। বিশেষ করে নারী ও বালিকাদের ব্যাপারে তালেবান কি করে তা পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, এ কথা সত্য যে, এসব শর্ত পূরণ না করলে আমরা তালেবান সরকারকে সমর্থন দেব না।

প্রাইস বলেন, আফগানিস্তানে যে নতুন সরকার গঠিত হবে, তার সঙ্গে আফগানের অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলোর একমত হতে হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তালেবান সরকারের সঙ্গে আফগান জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে হবে।

খবরে বলা হয়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা জোর দিয়ে বলেছে, তালেবান সরকারকে অবশ্যই আফগান জনগণের মতানুযায়ী, টেকসই এবং বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে হতে হবে। তালেবান সরকারে মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে হবে, বিশেষ করে নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

দেশগুলো আরও জানিয়েছে, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে তালেবান সরকারকে এবং সকল ধরনের অধিকারের লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে স্বীকৃতি পেতে পারে তালেবান সরকার।

মার্কিন নাগরিকদের প্রত্যাহার কার্যক্রমের মধ্যেই তালেবান রোববার (১৫ আগস্ট) কাবুল দখলে নেয় রক্তপাতহীনভাবে। বাইডেন আগেই জানিয়েছিলেন ৩১ আগস্টের মধ্যেই তাদের জনশক্তি ও সেনাদের আফগান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

ওইদিনই আফগানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি পালিয়ে যান দেশের বাইরে। নতুন সরকার ঘোষণার আগ পর্যন্ত তালেবানই এখন মূলত আফগানের আসল কর্তৃপক্ষ। আল-জাজিরার ওয়াশিংটন প্রতিনিধি রোজিল্যান্ড জর্দান জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি দল কাতারের দোহায় অবস্থান করছে।

সেখানে তারা আফগানিস্তানের ব্যাপারে একটি রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছেন তালেবানের সঙ্গে। জর্দান বলছেন, দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কে সরকার প্রধান হচ্ছেন তা একদিনের মধ্যেই বলে দেওয়া সত্যি কঠিন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে নেড প্রাইস বলেন, আফগানের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়ে মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নই এখন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য তালেবান মুখপাত্র সোহায়েল শাহীন বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষা ও নারীদের অধিকারের লঙ্ঘন তালেবান করবে না। তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান নেড প্রাইস।

তিনি বলেন, গত ২০ বছর আফগানিস্তানে যে পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে, সেরকম সহায়তা পেতে চাইলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের দেওয়া শর্তগুলো তালেবানকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।

এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন নেড প্রাইস। তিনি বলেন, তালেবানের নেওয়া পদক্ষেপের ওপরেই দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা যাবে কিনা তা বিবেচনা করবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।