শুধু বিমান নয় ভারতের স্বাস্থ্যখাতেও বিরাট ক্ষতি

আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনে বড় আকারে ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত। বিমানের রুট পরিবর্তনের ক্ষতি তো আছেই। দেশটির চিকিৎসা পর্যটন শিল্পও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

ভারতের একটি হাসপাতাল

প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক আফগানি চিকিৎসা করাতে ভারতে ভ্রমণ করে থাকেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আফগানদের কাছে ভারত একটি সুলভ দেশ। দেশটির হাসপাতালগুলোতে কম খরচে ভালো পরিষেবা পাওয়া যায়। বেশ কিছু তথ্য দিয়ে ভারতের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সঞ্জয় আগারওয়াল জানান, শুধুমাত্র আফগানিস্তান থেকেই এ খাতে প্রতি বছরে ভারতের অর্থনীতিতে যুক্ত হয় ১৫০ থেকে ২০০ কোটি রুপি। প্রতি বছর আফগানদের জন্য প্রায় ৩০ হাজার মেডিকেল ভিসা সরবরাহ করা হয়।

গত বছরের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে আগারওয়াল বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আয় আসে বাংলাদেশ থেকে। মোট আয়ের যা ৫৪.৩ শতাংশ। এর বাইরে ইরাক থেকে ৯, আফগানিস্তান থেকে ৮, মালদ্বীপ থেকে ৬ এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসে ৪.৫ শতাংশ। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে তালেবান সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেমন হয় তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কিন্তু এ কদিনে তালেবানের পক্ষ থেকে ভারত সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু দেখছে না নয়াদিল্লি। কিছু ক্ষেত্রে ভারতের প্রশংসা করলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশটিকে এক প্রকার হুমকিই দিয়ে রখেছে তালেবান কর্তৃপক্ষ।

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে পক্ষে-বিপক্ষে কিছুই বলা হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করলেও শেষ পর্যন্ত মুখ খোলেননি কোনো কর্মকর্তাই।

জানা যায়, আফগানিস্তান পুনর্নিমাণে ভারত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৪০০টি ভারতীয় প্রকল্প চলমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই দেশটিতে এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমনটাই আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি।

কাবুলের আকাশপথ বন্ধ রাখায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে আছে ভারতের অ্যাভিয়েশন। তালেবানের দখলে থাকা কাবুলের আকাশপথে ঢুকছে না অনেক দেশের বিমান। নিরাপত্তার খাতিরে পথটি ব্যবহার করা থেকে নিজেরাই বিরত রয়েছে। 

মূলত আকাশপথে এশিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার অন্যতম পথ হলো ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান রুট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বহু বিমান সংস্থাই নিরাপত্তার কারণে আফগানিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে চাইছে না।

এর আগে বালাকোট অভিযানের সময় পাকিস্তানের আকাশ পথ যখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সে সময়ও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এবারের পরিস্থিতি তারচেয়েও অনিশ্চিত।

ভারতের বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, করোনার আগে যত বিদেশি ফ্লাইট প্রতিদিন দিল্লির আকাশ পেরিয়ে পাকিস্তানে যেত, এখন যাচ্ছে তার মাত্র ৪০ শতাংশ। ইতোমধ্যেই ভারতের আকাশ ছেড়ে অনেক বিমান চীনের আকাশ দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা উড়ে যাচ্ছে।

ভারতে বাণিজ্য বন্ধ করলো তালেবান

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তালেবান। ভারতের সঙ্গে সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের (এফআইইও) বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে।

পাক-আফগান সীমান্তে অবস্থিত দুটি বাণিজ্যিক টার্মিনালও বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান। এতে পাকিস্তানের দিকেও পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে ভারতীয় রপ্তানিকারক সংস্থাগুলো।

আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। চলতি বছর এখন দেশটিতে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৮৩ দশমিক ৫ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে আফগানিস্তান থেকে ভারত আমদানি করেছে প্রায় ৫১ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য।