সচিবের অসুস্থ মায়ের সেবায় উপ-সচিবসহ ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী!

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদের মা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন। ৯৫ বছর বয়সী সেই মায়ের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন এক উপ-সচিবসহ ২৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী!

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ ও মন্ত্রণালয়ের চিঠির কপি

৩ দিনের জন্য তাদের লিখিত নির্দেশনা দিয়ে প্রতিদিন ৪ শিফটে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টাই সচিবের মায়ের পাশে দুই জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনার কপি গণমাধ্যমের হাতে চলে আসার পরই তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। যদিও সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম এমন কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছেন।

লিখিত ওই নির্দেশনা থেকে জানা যায়, এই একান্ত সচিব আজিজুল ইসলামই ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব সমন্বয় করছেন। এতে বলা হয়, সচিবের মায়ের সার্বিক অবস্থা পিএসকে জানাতে হবে। তার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ, টেস্ট করানো ও তার রিপোর্ট দ্রুত সংগ্রহ করা এবং সচিবের পিএসকে হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্টের কপি পাঠাতে হবে। সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেমন রোগীর কাছাকাছি থাকতে হবে, আবার তাদের উপস্থিতি রোগীর আত্মীয়দের কাছে জানান দিতে হবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ২৩ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ২৬ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রতিদিন ৪ শিফটে এই ৩ দিন দায়িত্ব পালন করবেন এই ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রথম দিন (২৩ আগস্ট) ৪ শিফটে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা হলেন- মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. ইলিয়াস হোসেন এবং অফিস সহায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলাম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের (ডিএলএস) এনিমেল প্রোডাকশন অফিসার আলী রেজা আহমেদ ও ল্যাব টেকনেশিয়ান বিভূ চন্দ, মৎস্য অধিদপ্তরের (ডিওএফ) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান এবং ট্রেইনি সহকারী সানোয়ার হোসেন।

দ্বিতীয় দিন (২৪ আগস্ট) যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা হলেন- ডিওএফ-এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ পাভেজ, অফিস সহায়ক মো. নাজির হোসেন পারভেজ, বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলম, ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, প্রোগ্রামার নূর মোহাম্মদ, অফিস সহায়ক মো. আব্দুল কাদের, ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক মিয়া ও ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. শহিদ উল্যাহ।

নির্দেশনা অনুযায়ী ততৃীয় দিন (২৫ আগস্ট) যারা দায়িত্বে থাকবেন তারা হলেন- উপ-সচিব পুলকেশ মণ্ডল ও ট্রেইনি সহকারী জগদীশ চন্দ্র দাস, বিএলআরআই এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসলামুল আলম ও ট্রেইনি সহকারী মো. সানোয়ার হোসেন, ডিওএফ এর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ কর্মকর্তা মো. সামছুল আলম পাটওয়ারী, অফিস সহায়ক মো. মফিজ হোসেন, ডিএলএস এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম নিয়াজ মোর্শেদ এবং ল্যাব টেকনেশিয়ান জিএম শাহিনুর ইসলাম।

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের করোনা ইউনিটের সামনে গিয়ে তথ্যের সত্যতাও পাওয়া যায়। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই জন স্বীকার করেন যে, সচিবের মায়ের যেকোনো দরকারে ৬ ঘণ্টা সেখানে ডিউটি করতে হচ্ছে তাদের। তবে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদকে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অবশ্য এ বিষয়ে সচিবের একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম বলছেন, সচিব স্যারের মায়ের বয়স ৯৫ বছর। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার সচিব স্যারও নিজেও অসুস্থ, এক সপ্তাহ আগে তিনিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। তাই মানবতার খাতিরেই আমাদের মধ্যে অনেকেই সচিব স্যারের মাকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন। বিষয়টি জানার পর বরং সচিব স্যারই আমাদের হাসপাতালে ভিড় না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যদি দেখতে যেতে চন তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একেকজন একেক সময়ে যেতে হবে।

চিঠির বিষয়ে একান্ত সচিব আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো চিঠি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইস্যু করা হয়নি। গণমাধ্যমে যে চিঠিটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে স্মারক নম্বর কিংবা কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই। গণমাধ্যম এ রকম একটি ভুয়া চিঠির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে।