নাগরিকত্ব পাচ্ছেন আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এখনো বাংলাদেশে আটকে আছেন অন্তত আড়াই লাখ পাকিস্তানি। রাজধানী ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের বসবাস। অর্ধশত বছর অতিবাহিত হলেও তারা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাননি, ধরে রেখেছেন নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির অন্যান্য দিক। এসব পাকিস্তানি কিংবা বিহারীদের আবারও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বিষয়টি নতুন কোনো ইস্যু নয়। আটকে পড়া এসব পাকিস্তানির প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়- এই বাস্তবতা অনুধাবন করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আত্মীকরণের চেষ্টা হয়েছে বেশ আগে থেকেই। ২০০৩ সালেই উচ্চ আদালতের একটি রায়ে বলা হয়েছে, এসব পাকিস্তানিরা ইচ্ছে করলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। কিন্তু সেটা বাস্তবে খুব একটা দেখা যায়নি।

আদালতের ওই ঘোষণার পর তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশের অনিচ্ছাসহ আরও নানা জটিলতার কারণে সেটা বেশিদূর আগায়নি। যাদের জন্ম পাকিস্তানে তারা কোনোভাবেই এই দেশের নাগরিকত্ব নিতে রাজি নন। তবে যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে এবং সেটা দিনদিন বাড়ছে।

কয়েক বছর আগে ঢাকায় বসবাস করা এমন ১০ তরুণ ভোটার হওয়ার অধিকার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার রায়ে তাদেরকে ভোটার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এ কারণে আইনগতভাবে তাদেরকে শরণার্থী বলার সুযোগও শেষ হয়ে যায়। তাই সরকার চাইছে, তারা বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে আর দশজনের মতোই এখানে জীবন যাপন করুক।

ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পে প্রায় ৪০ হাজার পাকিস্তানি বসবাস করেন। কয়েক দফার চেষ্টায় এর মধ্যে ১১ হাজার ভোটার হয়েছেন। কাগজে-কলমে তারা এখন বাংলাদেশি। বাকিদেরকেও নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আরেক দফা প্রক্রিয়াটা শুরু করতে চায় কর্তৃপক্ষ। সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতার পর আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের জন্য দুই দেশের সরকারই যৌথ উদ্যোগ নেয়। সে সময় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৩ জন পাকিস্তানি নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তার পরেই থেমে গেছে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

এরপর জেনারেল জিয়াউল হক যখন পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন তখনও কয়েক দফা চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়। বারংবার চেষ্টা করা হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়ার পেছনে পাকিস্তানের ঘন ঘন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়ে থাকে।