কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী নেতা আলি শাহ গিলানির মৃত্যু

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি ইন্তেকাল করেছেন। গতকাল বুধবার রাত ১০টায় শ্রীনগরে ৯২ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। এর আগে বহুবার গিলানির মৃত্যুর ভুয়া খবর ছড়িয়েছিল। গত বছরের জুন মাসে সৈয়দ আলি শাহ গিলানির স্বাস্থ্য নিয়ে গুজবের জেরে উপত্যকায় হাই অ্যালার্ট পর্যন্ত জারি করতে হয়েছিল প্রশাসনকে।

কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি

২০০৮ থেকে হায়দরপুরার বাসভবনে গৃহবন্দি ছিলেন তিনি। ভারত সরকার বিভিন্ন অভিযোগ এনে গৃহবন্দি করে রাখে তাকে। তিনি কাশ্মিরে পাকিস্তানের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার কাশ্মিরের পাকিস্তানপন্থী নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ নেয়। সে সময় গিলানিকে জরিমানা করা হয় এবং তার পাসপোর্ট বাতিল করে বিদেশ যাওয়া আটকে দেয় প্রশাসন।

এর মধ্যেই গত বছর হঠাৎ করে হুরিয়তের নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন গিলানি। কাশ্মিরবাসীর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে হুরিয়তের কিছু নেতা আর্থিক তছরুপ করেছেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী ছিলেন কাশ্মিরের এই নেতা

১৯২৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বারামুলায় জন্ম নেন গিলানি। পড়াশোনা করেন লাহোরের ওরিয়েন্টাল কলেজে। এরপর সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমে তিনি ছিলেন জামায়াত-ই-ইসলাম কাশ্মিরের নেতা। পরে তিনি তেহরিক-ই-হুরিয়ত গঠন করেন।

জম্মু ও কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী দলগুলোর সংগঠন অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২, ১৯৭৭ ও ১৯৮৭ সালে তিনি জম্মু ও কাশ্মিরের সোপোর আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

গিলানির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি টুইটে লিখেন, গিলানির ইন্তেকালে আমরা শোকাহত। অনেক ক্ষেত্রেই তার সঙ্গে সহমত না হলেও নিজের বিশ্বাসের প্রতি অবিচল ও একনিষ্ঠতার জন্য তাকে শ্রদ্ধা করি।

এদিকে সৈয়দ আলি গিলানির মৃত্যুতে পাকিস্তান গভীর শোক প্রকাশ করেছে। শোক জানাতে তারা জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখবে এবং একদিনের জাতীয় শোক পালন করবে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করে টুইটারে লিখেছেন, কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা সৈয়দ আলি গিলানির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। কাশ্মিরের জনগণ এবং তাদের স্বাধিকারের দাবি আদায়ে গিলানি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এর জন্য তিনি অধিকৃত কাশ্মিরে সরকারের হাতে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি তার নীতিতে ছিলেন অবিচল। তিনি বলতেন, আমরা পাকিস্তানের এবং পাকিস্তান আমাদের। আমরা তার সেই বক্তব্যকে স্যালুট জানাই।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য ট্রিবিউন