জবিউল্লাহ: তারা আমাকে ভূত মনে করতো
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের সময়কাল খুব বেশি দিনের নয়। দুই যুগের কিছুটা বেশি। এর মধ্যে শেষ দুই দশক ধরেই তারা ছিল ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তারা একেবারে অস্তিত্বহারা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে মার্কিন বাহিনী বা সরকারি বাহিনীর সাথে তাদের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যেত। শেষ কয়েক বছরে তালেবানের লড়াইয়ের যেসব খবর এসেছে, তার সঙ্গে জড়িত ছিল একটি নাম।
তালেবান ও গণমাধ্যম উভয় স্থানেই তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা
সেই নামটা হলো জবিউল্লাহ মুজাহিদ, যিনি তালেবানের মুখপাত্র হিসেবেই অধিক পরিচিত। তালেবানের যাবতীয় খবর সংবাদ মাধ্যমগুলোতে যেত তার নামেই। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- তাকে কখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খবরে বলতো- অজ্ঞাত স্থান থেকে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বা দাবি করেছেন...।
এই জবিউল্লাহ মুজাহিদের সামান্য খোঁজ-খবর পাওয়ার জন্য মার্কিন বাহিনী স্থানীয়দের বার বার টাকা দিয়েছে। প্রচুর অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে এক সময় তারা ভাবতে শুরু করে যে, এ চরিত্রটি বাস্তবিক কোনো চরিত্র নয়। একটি কাল্পনিক চরিত্রের ওপর ভর করেই তালেবান তাদের প্রচারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে।
কাবুলে সংবাদ সম্মেলনের পর এক সংবাদকর্মীর সাথে কথা বলছেন জবিউল্লাহ
গত মাসের মাঝামাঝি তালেবান কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরই জবিউল্লাহ মুজাহিদ কল্পনা থেকে বাস্তবে ধরা দেন। তার সাথে দীর্ঘ সময় যাদের যোগাযোগ ছিল সংবাদ সংগ্রহের খাতিরে, তারা তাকে দেখে বিস্মিত হন। তারা ভাবতেও পারেননি আসলেই তিনি জবিউল্লাহ মুজাহিদ। অবশ্য পরে তার সাথে আলোচনায় তারা স্বীকার করে নিয়েছেন- পাগড়ি, জুব্বা পড়া এই ব্যক্তিত্বই প্রকৃত জবিউল্লাহ মুজাহিদ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের গণমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ রকম অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন তালেবানের এই প্রধান মুখপাত্র। এ সময় তিনি অকপটে তুলে ধরেন, কীভাবে আফগানিস্তানে যুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য অভিযান এবং মার্কিন অনুসন্ধান এড়ানোর ক্ষেত্রে তার ‘অদ্ভুত’ কৌশল তাকে একটি ‘ভূতের মতো’ চরিত্র প্রদান করে।
জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তারা (মার্কিন ও আফগান জাতীয় বাহিনী) মনে করতো আমার কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি তাদের অভিযান এবং আমাকে ধরার প্রচেষ্টা থেকে এতবার পালিয়ে এসেছি যে, তারা এক পর্যায়ে গুরুত্ব সহকারে ভেবে নিয়েছিল ‘জবিউল্লাহ’ একজন তৈরি ব্যক্তিত্ব মাত্র, প্রকৃত কোনো মানুষ নয়।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে কাবুলে বাস করেছি, ঠিক সবার নাকের ডগায়। আমি দেশের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরেছি। ফ্রন্টলাইনে আমার প্রথম সারির অনুমোদন ছিল। ফলে তালেবানের কাজ ও আপ টু ডেট তথ্য আমার কাছে থাকত, যা আমরা প্রচার করতাম। এটা আমাদের প্রতিপক্ষের জন্য বেশ উদ্বেগজনক ছিল।
জবিউল্লাহ জানান, মার্কিন বাহিনী তার খোঁজ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। স্থানীয়দের প্রায়ই অর্থ দিয়ে তার খোঁজ জানতে চাইতো। এমনকি তার সন্ধান পেতে কয়েক ডজন গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযানও চালানো হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো তিনি কখনো আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তাও করেননি, চেষ্টা তো দূরের কথা।
তালেবান মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে জবিউল্লাহ জানান, তিনি যথাসম্ভব চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই কাজের ধরনই এমন যে, কখনো কখনো আমি পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারতাম না বা পর্যাপ্ত খেতে পারতাম না। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা ধরে কমান্ডারদের সাথে সমন্বয় করা- যেমন ফোনের উত্তর দেওয়া এবং মিডিয়া আউটলেটগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা- এ কাজগুলো করতে হতো। কিন্তু আমি নিজেই নিজেকে এ কাজের জন্য কুরবানি করেছি।
তালেবানের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালেবানের সাবেক প্রধান মোল্লা ওমরকে কখনো দেখার সুযোগ হয়নি তার। তিনি সব সময় আত্মগোপনে থাকায়, তার সাথে দেখা করার সৌভাগ্য আমি পাইনি। তবে আমি শেখ মোল্লা মনসুর এবং শেখ হাইবাতুল্লাহর সাথে কাজ করেছি। তারা আমার কাজ এবং আমার পেশাদারী পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন। এজন্য আমি খুব গর্বিত।
তাকে ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়- তার জবিউল্লাহ মুজাহিদ নামটি কি তার আসল নাম, নাকি তিনি এটি ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করছেন? এর জবাবে তিনি বলেন, জবিউল্লাহ আমার আসল নাম। তবে দলের সিনিয়র সদস্যরা তার প্রতি খুশি হয়ে তাকে এ লকবটি (মুজাহিদ) নামের সাথে যুক্ত করে দেন। এক পর্যায়ে তারা এভাবেই ডাকতে থাকেন। এরপর তিনি আর এটিকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেননি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.