মেয়রের পরিকল্পনা ‘ঘোড়ার আগে গাড়ির মতো’

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকায় প্রাইভেট কার তথা ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এতে সর্বত্র যানজট লেগে থাকে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন, প্রাইভেট কার, প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের, ডিএনসিস, মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে তার এই পরিকল্পনাকে ‘ঘোড়ার আগে গাড়ির মতো’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মোবাশ্বের হোসেন ও ড. এম শামসুল হক

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম শনিবার ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, গুলশান, বনানীর মতো ঢাকার অভিজাত এলাকায় প্রাইভেট কার প্রবেশ করতে হলে ট্যাক্স দিতে হবে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই যানজট বেড়ে গেছে। তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রথমে অভিজাত এলাকায় মেশিন বসিয়ে গাড়ি গণনা করা হবে। কত গাড়ি প্রবেশ করে, সেটা আগে দেখতে চাই। তারপর একটি সমীক্ষা করে বিষয়টি কার্যকর করা হবে।

এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ডিএনসিসি মেয়রের চিন্তা ঠিক আছে, কিন্তু সেই চিন্তা বাস্তবায়নে আগে আরও অনেক কিছু করার আছে। এর মধ্যে রয়েছে— যারা গুলশান-বনানী হয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করেন, তাদের জন্য বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। তার ট্যাক্স আরোপ করা যায় না।

রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি ওভারভিউ

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে বহু আগে থেকেই এই ব্যবস্থা আছে। তবে সেখানে বিকল্পও আছে। ফুটপাথকে দখলমুক্ত করে হাঁটার উপযোগী করতে হবে। সাইকেল চালানোর জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এসব ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে শুধু ট্যাক্স আরোপ করলে কোনো কাজ হবে না।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের, বুয়েট, শিক্ষক এবং নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক জার্মান গণমাধ্যমটির বাংলা সংস্করণকে বলেন, আরও অনেক স্বীকৃত ও কার্যকর পদ্ধতি আছে, যা প্রয়োগ করে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ কমানো যেতে পারে। কোনো শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমে দেখতে হবে যে, বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থায় কতটি প্রাইভেট কার চলতে পারবে। তার ভিত্তিতেই গাড়ি আনার জন্য রেজিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একটি পরিবারের সর্বোচ্চ কয়টি গাড়ি দরকার সেটাও দেখতে হবে। ঢাকায় এমনও পরিবার রয়েছে, যাদের ৬টি গাড়ি আছে। কীভাবে এটা সম্ভব?

বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমাদের দেশে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনাকে তো উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেমন— সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সফট লোন দেওয়া হয়। ফুয়েল, জ্বালানি, দেওয়া হয়। ড্রাইভারের বেতন দেওয়া হয়। সুতরাং গাড়ি না কেনাই তো লোকসান। অনায়াসে গাড়ি পেয়ে যান ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে শত শত গাড়ি কিনে ব্যবহার করা হয় ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে। তাই এগুলো আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ডিএনসিসি মেয়রের পরিকল্পনাকে এই দুই বিশেষজ্ঞ ‘ঘোড়ার আগে গাড়ির মতো’ বলে মনে করছেন। তাদের মতে, সার্বিক পরিকল্পনার অধীনে এটি করতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে এর স্বীকৃত পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। যেমন— একটি পরিবার সর্বোচ্চ একটি গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে— এমন নীতিমালা করতে হবে। অনেক বেশি মাত্রায় ট্যাক্স আরোপ করতে হবে। এগুলো করতে পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাইভেট কারের সংখ্যা কমে যাবে। তখন হয়তো এমনও হতে পারে যে, রাস্তায় ট্যাক্স আরোপ করার প্রয়োজনই হচ্ছে না। পাশাপাশি উন্নত করতে হবে গণপরিবহন।