তুরস্কের ড্রোন: নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের, এবার রপ্তানির পালা

তুরস্কের উৎপাদিত ড্রোন এখন বিশ্বে সুপরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে এই ড্রোনের সশস্ত্র ব্যবহারে সফলতা পাওয়ার পর দেশটি এর রপ্তানি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে। মরক্কো ও ইথিওপিয়ার সাথে ড্রোন বিক্রির চুক্তিও করেছে দেশটি। বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে তুরস্ক ড্রোন রপ্তানি সম্প্রসারণে একধাপ এগিয়ে গেল। তুরস্কের এই ড্রোন প্রযুক্তি গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। রয়টার্স।

টার্কিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসেম্বলি জানাচ্ছে, ইথিওপিয়ায় প্রতিরক্ষা এবং বিমান রপ্তানি এই বছরের প্রথম তিন মাসে ৫১ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ডলার। আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে লাফিয়ে বেড়েছে ড্রোন রপ্তানি। গত বছরের ৪ লাখ ২ হাজার ডলারের বিপরীতে মরক্কোতে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭৮.৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ড্রোন। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই ছিল ৬২ মিলিয়ন ডলার।

তুর্কি রপ্তানিকারক সংস্থার মতে, সামগ্রিকভাবে তুর্কি প্রতিরক্ষা ও বিমান রপ্তানি এই বছরের প্রথম তিন চতুর্থাংশে ২.১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

খবরে বলা হচ্ছে, ইথিওপিয়ায় ড্রোন রপ্তানি আঙ্কারা ও কায়রোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এটি নীল নদের জলবিদ্যুৎ বাঁধের উপর আদ্দিস আবাবার সাথে কায়রোর মতবিরোধ বাড়িয়ে তুলতে পারে। মিশরের দুটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, কায়রো যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু ইউরোপীয় দেশকে তুরস্কের ড্রোন রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করতে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে। তৃতীয় মিশরীয় সূত্র জানিয়েছে, কায়রো চাচ্ছে আঙ্কারার সাথে সরাসরি আলোচনায় বসতে। কারণ মিশর তুরস্কের সাথে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে।

আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, তুরস্ক, ইথিওপিয়া ও মরক্কো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সশস্ত্র ড্রোন চুক্তি ঘোষণা করেনি। একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, ইথিওপিয়া ও মরক্কো উভয়ই ‘বেরাকতার টিবি২’ ড্রোন কেনার অনুরোধ করেছিল। তাদের দাবি ছিল চুক্তির মধ্যে ড্রোন প্রশিক্ষণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কূটনীতিক বলেন, মরক্কো মে মাসে অর্ডার করা প্রথম সশস্ত্র ড্রোনের চালান পেয়েছে। আর ইথিওপিয়া ড্রোন অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে কিন্তু তা এখনও অস্পষ্ট। তবে চুক্তিতে কতগুলো ড্রোন রপ্তানি করা হয়েছে তার কোনো উলে­খ করেনি সূত্রগুলো। ইউক্রেন ও ন্যাটো অংশীদার পোল্যান্ডও তুরস্কের সশস্ত্র ড্রোনের অর্ডার দিয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্কের এই ড্রোন ইসরায়েল, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ড্রোনের তুলনায় সস্তা।

সরকারি তথ্যে জানা যাচ্ছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা এবং বিমান রপ্তানি গত দুই মাসে মরক্কো এবং ইথিওপিয়ায় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেখানেও নির্দিষ্ট সংখ্যা উলে­খ নেই। ইথিওপিয়ার সামরিক বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মরক্কোর সরকার ও সামরিক বাহিনী প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা সংগ্রহ ও উন্নয়ন সংস্থাও তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয়নি। ড্রোন টিবি২ মডেলটি দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের জামাতা ডিজাইন করেন। তিনিও ড্রোন রপ্তানির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

খবরে বলা হচ্ছে, তুর্কি সামরিক বাহিনী গত বছর সিরিয়া এবং লিবিয়ায় এই ড্রোন ব্যবহার করেছিল।

লিবিয়ায় রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর সমর্থিত পূর্ব বাহিনীর বিরুদ্ধে ত্রিপোলি ভিত্তিক সরকারকে সমর্থন করেছিল আঙ্কারা। এছাড়া নাগর্নো-কারাবাখে তুরস্কের ড্রোন আর্মেনিয়া বাহিনীকে পরাজিত করতে আজারবাইজানকে সহায়তা করেছিল।