নামে নামে নাকি যমে টানে। না, যমে টানার মতো কিছু এবার ঘটেনি। তবে একটি নাম স্মৃতির আড়াল খুঁড়ে বের করে এনেছে অন্য একটি নাম। যে নামটি ব্রাজিল তথা বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের মানসপটে ‘জ্বলন্ত এক ট্র্যাজিক-হিরো’।

barmosa brazil 1950 world cup 2এই বারবোসায় সেই বারবোসা স্মরণ

ঠিকই ধরেছেন। ১৯৫০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ‘মারাকানাজো ট্র্যাজেডি’র ট্র্যাজিক নায়ক বারবোসার কথাই বলা হচ্ছে। হঠাৎ করে স্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এই ট্র্যাজিক নায়ক আলোচনায় উঠে আসার উপলক্ষ ব্রাজিলের বর্তমান জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য গ্যাব্রিয়েল বারবোসা আলমেইদা। জাতীয় দলের হয়ে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোর ২৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের অভিষেক অবশ্য হয়েছে ২০১৬ সালে। তবে দলে নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, ফিলিপে কুতিনহো, রবার্তো ফিরমিনো, রিচার্লিসনের মতো তারকাদের ভিড়ে গ্যাব্রিয়েল বারবোসা একাদশে সুযোগই তেমন পাচ্ছিলেন না। যে কারণে গত ৫ বছরে বিখ্যাত হলুদ জার্সি পরে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৭টি ম্যাচ।

এই ১৭ ম্যাচের বেশির ভাগ ম্যাচেই তিনি খেলেছেন বদলি হিসেবে। তবে সম্প্রতি নিজের জাতটা জানান দিতে শুরু করেছেন গ্যাব্রিয়েল বারবোসা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের সবশেষ তিন ম্যাচে তিনি করেছেন দুই গোল। গোল করেছেন গত বৃহস্পতিবার উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটিতেও। সাম্প্রতিক এই ফর্মই আলোচনায় তুলে এনেছে গ্যাব্রিয়েল বারবোসাকে। আর গ্যাব্রিয়েল বারবোসার আলোচনাতেই উঠে এসেছে ১৯৫০ বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো বারবোসার নামটি।

barmosa brazil 1950 world cup 1এই বারবোসায় সেই বারবোসা স্মরণ

নামের মিল ছাড়াও দুজনের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। দুজনেই ফুটবলার। দুজনেরই জন্ম ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। সবচেয়ে বড় মিল, দুজনেই সুযোগ পেয়েছেন ব্রাজিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানোর। তবে দুজনের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। গ্যাব্রিয়েল বারবোসা একজন ফরোয়ার্ড। আর ১৯৫০ বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো বারবোসা ছিলেন একজন গোলরক্ষক।

তার পুরো নাম মোয়াসির বারবোসা নাসিমেন্তো। বিশ্ববাসী তাকে বারবোসা নামেই চিনে। হালের গ্যাব্রিয়েল বারবোসা তো সবে ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কত দূর যেতে পারবেন, সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। বিপরীতে প্রতিভা-দক্ষতায় মোয়াসির বারবোসা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সুউচ্চ আকাশে। ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকের বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক হিসেবেই বিবেচনা করা হতো তাকে। বিস্ময়কর হলো, তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন যে, হাতে গ্লাভসই পরতেন না! গ্লাভস না পরেও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।

barmosa brazil 1950 world cupএই বারবোসায় সেই বারবোসা স্মরণ

কিন্তু ওই যে ভাগ্যে তার লেখা ছিল ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হবেন। বিশ্বসেরা গোলরক্ষক হয়েও বিশ্বমঞ্চ মাতানোর সুযোগ তেমন পাননি বারবোসা। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ডামাডোলে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ হয়নি। অথচ এই সময়টাতেই তিনি অবস্থান করছিলেন ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে। তবে বিশ্বকাপ না হওয়ার কারণে নয়, বারবোসা মূল ‘ট্র্যাজিক-হিরো’ বনে গেছেন বিশ্বকাপ খেলেই। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একটিই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছেন কিংবদন্তি বারবোসা। অমিয় প্রতিভা ও দক্ষতার বিচারে ১৯৫০ সালে নিজেদের ঘরের মাটির সেই বিশ্বকাপে তার নায়ক বনে যাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্য বারবোসাকে বানিয়ে দেয় ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় খলনায়ক। ব্রাজিলের সেই চির আক্ষেপের ‘মারাকানজো ট্র্যাজেডির কলঙ্কিত নায়ক!

শুধু ব্রাজিলের নয়, বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিক-হিরো তিনি। ফুটবলের কারণে ইতিহাসে আর কাউকে এতটা ঘৃণিত জীবন কাটাতে হয়েছে কিনা জানা যায় না! ১০-২০ বছর নয়, কাটায় কাটায় ৫০টি বছর তাকে কাটাতে হয়েছে বন্দী জীবন। আইনের জেলখানায় নয়, বারবোসা বন্দী হয়েছিলেন ঘৃণার জেলখানায়!

অপরাধ করে আইনের জেলখানায় বন্দী হলেও একটা স্বস্তি থাকে, জীবনের স্বাদ খানিকটা উপভোগ করা যায়! কিন্তু বারবোসা প্রায় বিনা দোষে বন্দী হয়েছিলেন ঘৃণার জেলখানায়। হ্যাঁ, যে ঠুনকো অপরাধে বারবোসাকে চরম ঘৃণার পাত্র বানিয়েছিল ব্রাজিলিয়ানরা, ফুটবলে সেটি আসলে তেমন অপরাধই না! সেটি ছিল মুহূর্তের ভাবনায় ছোট্ট একটা সিদ্ধান্তের ভুল মাত্র!

সেই ভুলটা কী ছিল, সেটি জানার আগে ১৯৫০ বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের উন্মাদনার মাত্রা বোঝাটা জরুরি। ব্রাজিল ফুটবলের দেশ। কিন্তু ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু হলেও প্রথম ৩টি বিশ্বকাপে (১৯৩০, ১৯৩৪ ও ১৯৩৮) ব্রাজিল শিরোপার নাগাল পায়নি। এরপরের দুটি বিশ্বকাপ হতে পারেনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে। ফলে ব্রাজিলিয়ানদের বিশ্বকাপ শিরোপা আকাঙ্খা আরও তীব্রতর হয়। অবশেষে ১৯৫০ বিশ্বকাপ আয়োজকের অধিকার পায় ব্রাজিল। ব্রাজিলের দলটাও ছিল অসাধারণ সব তারকায় ঠাসা। সব মিলে নিজেদের মাটির বিশ্বকাপ ঘিরে ব্রাজিলিয়ানদের শিরোপা উন্মাদনা যেন আকাশ ছোঁয়া।

দেশবাসীর সেই স্বপ্নে আরও রঙ ছড়িয়ে বারবোসা, অগাস্তো, নিতন সান্তোস, আদেমির, ফ্রাসাও, জিজিনহোদের ব্রাজিল দুর্বার গতিতে শিরোপার খুব কাছেও চলে গিয়েছিল। ১৯৫০ সালের ১৬ জুলাই ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও ব্রাজিল শুরু করেছিল এগিয়ে থেকে। রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচটির আগে প্রতিদ্বন্দ্বী উরুগুয়ের চেয়ে পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। ফলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ড্র করলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রাজিল।

ঘরের মাঠ। প্রতিপক্ষ উরুগুয়েও ছিল তুলনামূলকভাবে অনেকটা দুর্বল। সমীকরণও পক্ষে। হার এড়ালেই হলো। ফলে ব্রাজিলিয়ানরা ধরেই নিয়েছিল বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে তাদের। প্রথম বিশ্বকাপের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে তাই মারাকানায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল এক লাখেরও বেশি মানুষ। আম দর্শক থেকে শুরু ফুটবল বোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনীতিক- দেশটির আপামর জনসাধারণের একটাই বিশ্বাস ছিল- তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্রাজিলিয়ানদের সেই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ব্রাজিলকেই প্রথম এগিয়ে দেন ফ্রাসাও। ম্যাচের শুরু থেকেই সমুদ্রের গর্জন তুলে নাচতে থাকা মারাকানার গর্জন-আওয়াজ আরও বেড়ে যায়।

ম্যাচটি ছিল রাতে। ব্রাজিলের গণমাধ্যমগুলো তাই ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরই ব্রাজিলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ম্যাচ রিপোর্ট তৈরি করে ছাপা খানার প্লেট তৈরি করে ফেলে! শুধু দু-এক জায়গায় ফাঁকা রাখে, স্কোর বসিয়ে দেওয়ার জন্য। তখন তো আর এখনকার মতো কম্পিউটারে কম্পোজ হতো না। ছাপার প্লেটে হাতে অক্ষর বসিয়ে বসিয়ে নিউজ তৈরি করা হতো। এতসব আয়োজন করতে গিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের একবারের জন্যও মনে হারের সংশয় জাগেনি! তা জাগলে কি আর নিজেদের চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে ম্যাপ রিপোর্ট তৈরি করে ফেলে।

কিন্তু তাদের উচ্ছ্বাস-আবেগের স্রোত ভেদ করে তা না জাগলেও বাস্তবে ঘটেছিল সেটাই। ব্রাজিলিয়ানদের বাড়া ভাতে পানি ঢেলে ম্যাচটা ২-১ গোলে জিতে যায় উরুগুয়ে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় দ্বিতীয় বারের মতো। আর এই হারের জন্য ব্রাজিলিয়ানরা দায়ী করেন গোলরক্ষক বারবোসাকে। কারণ উরুগুয়ে জয়সূচক গোলটি যে পেয়েছিল বারবোসার ভুলেই!

ম্যাচের ৬৬ মিনিটে উরুগুয়েকে সমতায় ফেরান শাফিনো। মারাকানার ব্রাজিলিয়ান উন্মাদনায় তখনো তেমন ভাটা পড়েনি। কারণ, ১-১ গোলে ড্র হলেও তো চ্যাম্পিয়ন হবে ব্রাজিলই। কিন্তু তখন ভাটা না পড়লেও ৭৯ মিনিটে একেবারে চুপসে যায় মারাকানা। দুর্দান্ত এক গোল করে মারাকানাকে স্তব্ধ করে দেন আলসিডেস ঘিঘিয়াও। ফুটন্ত তরকারিতে জগভর্তি পানি ঢেলে দিলে যেমন হয়, ঘিঘিয়াওয়ের গোলটির পর ঠিক সেভাবেই নিভে যায় ব্রাজিলিয়ানদের গর্জন, আনন্দ-নৃত্য। মুহূর্তেই মারাকানা হয়ে উঠে শোকাহত বাড়ি।

ম্যাচের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলিয়ানদের সেই স্তব্ধতা আরও প্রকট হয়। ম্যাচ শেষের বাঁশির পর মনেই হচ্ছিল না, একটু আগেও সেখানে গগণবিদারী চিৎকার-চেচামেচিতে মেতেছিল লক্ষাধিক মানুষ। মনেই হচ্ছিল না, সেখানে জীবিত কোনো মানুষ আছে! বাতাসে কান পাতলে শুধু স্বপ্নভঙ্গের কষ্টের কান্নার গোংড়ানির শব্দই শোনা যাচ্ছিল!

শুধু মারাকানা স্টেডিয়াম নয়। পুরো ব্রাজিলই হয়ে উঠে শশ্মানপুরী। সর্বত্রই চলে শোকের মাতম। ব্রাজিলিয়ানদের এই বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গ ‘মারাকানাজো ট্র্যাজেডি’ হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। আর ব্রাজিলিয়ানরা এই ট্র্যাজেডির জন্য বলির পাঠা বানিয়েছে বারবোসাকে। তাদের এক কথা- বারবোসার জন্যই হারতে হয়েছে। সেই আসল কালপ্রিট।

বারবোসার দায় কিছুটা ছিল। তবে দায় যতটা, তার চেয়ে লক্ষ-হাজার গুণ বাড়িয়ে তাকে ইতিহাসের কলঙ্কিত নায়ক বানিয়ে দেয় ব্রাজিলিয়ানরা। ঘিঘিয়াও মাঝমাঠ এলাকা থেকে বল ধরে ডানপ্রান্ত দিয়ে তীব্র গতিতে ছুটে আসছিলেন ব্রাজিলের গোলপোস্টের দিকে। গোলরক্ষক বারবোসা ভেবেছিলেন ঘিঘিয়াও হয়তো বাম প্রান্তে থাকা কোনো খেলোয়াড়কে লক্ষ্য করে পাশ বাড়াবেন। এ রকম পজিশন থেকে সাধারণত সেটাই করা হয়। আর বিশ্বসেরা বারবোসা তো এ রকম অভিজ্ঞতার মুখে কতবারই পড়েছেন। নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি পোস্ট ছেড়ে একটু উপরে যান। কিন্তু তার ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে ঘিঘিয়াও ব্রাজিলিয়ান এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিজেই প্রথম পোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন। পোস্ট ঘেঁষে তার শট জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে।

বারবোসা অবশ্য শটটি রুখে দেওয়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার প্রচেষ্টাটা ছিল অহেতুক। কারণ, তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে ঘিঘিয়াওয়ের শট ঠেকানো সম্ভব ছিল না! মুহূর্তের সিদ্ধান্তে এমন ভুল অনেকেই করেন। কিন্তু বারবোসার এই ভুল ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ছিল ক্ষমার অযোগ্য। ক্ষমা তারা কখনো করেওনি বারবোসাকে। বরং ঘৃণার জেলখানায় বন্দী করে রেখেছিল আজীবন।

ওই ম্যাচের পর বারবোসার চার পাশটা যেন অদৃশ্য একটা ঘৃণার দেয়ালে ঝুলে যায়। যেখানেই গেছেন, মানুষ তাকে ঘৃণার তীরে বিদ্ধ করেছে। কাছের মানুষ থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, দেশের মানুষ-বারবোসাকে কালপ্রিট বলে গালি দিতে কার্পণ্য করেননি কেউই। বারবোসা বোবা মানুষের মতো মাথা নিচু করে সহ্য করেছেন সব। লজ্জায়, অপমানে মাথা তোলার সাহস পাননি।

সমালোচনা, ঘৃণার তীর থেকে বাঁচতে নিজের জীবনে শিকল পড়ান তিনি। জনসমক্ষে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেন। ওই ঘটনার পরও অবশ্য অনেক দিন ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন। সদস্য ছিলেন ব্রাজিল জাতীয় দলেও। কিন্তু ক্লাব বা জাতীয় দলের সতীর্থদের সাথেও সেভাবে মিশেননি। বেশির ভাগ সময়ই একাকী অনুশীলন করেছেন। অনুশীলন বা ম্যাচ খেলে চুপচাপ বাড়িতে চলে এসেছেন। ফুটবলীয় কারণের বাইরে বাকি সময় বাড়িতেই কাটিয়েছেন।

খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর নিজেকে একেবারেই গৃহবন্দী করে ফেলেন। ঘুরতে বা শপিংমলে যাওয়া তো দূরের কথা, বাড়ির কাছের মুদি দোকানেও যেতেন না। কারণ, অতি প্রয়োজনেও যদি বাড়ি থেকে বের হতেন, কেউ দেখলেই ঘৃণাভরে নানা রকম গালমন্দ করতো। এমনভাবে তাকাতো যেন, একসঙ্গে কত মানুষকে খুন করেছেন তিনি! হাসি, আনন্দ, হইহুল্লোড়, এর কোনো কিছুই বারবোসার জীবনে ছিল না। মন খুব বেশি রকম বিষিয়ে উঠলে কখনো সখনো নিজের সাবেক ক্লাবগুলোর খেলা দেখতে চুপিচুপি স্টেডিয়ামে যেতন। তবে স্টেডিয়ামে গেলেও বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। তার জীবদ্দশাতেই ৪টি বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে। কিন্তু এতগুলো বিশ্বকাপ জয়ের পরও বারবোসাকে ক্ষমা করেনি ব্রাজিলের মানুষ।

জীবনের পড়ন্তবেলায় এই কষ্টের জীবন নিয়ে ব্রাজিলের এক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন বারবোসা। সাক্ষাৎকারে তিনি কান্নাভেজা কণ্ঠে অতি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ফৌজদারি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ বছরের জেল। অথচ ৫০ বছরেও আমার অপরাধের ক্ষমা হলো না!’

ব্রাজিলের মানুষ তাকে কতটা ঘৃণা করতো, তা বোঝাতে গিয়ে বিশেষ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন বারবোসা, ‘ওই মারাকানাজো ঘটনার অনেক অনেক বছর পর একবার আমি একটা শপিংমলে যাই। খানিকটা ছদ্মবেশও নিয়েছিলাম। যাতে লোকজন আমাকে চিনতে না পারে। কিন্তু শপিংমলের ভিড়ের মধ্যে ঠিকই এক ভদ্রমহিলা আমাকে চিনে ফেলেন। যিনি তার এক ছোট্ট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শপিংমলে এসেছিলেন। আমাকে দেখার পরই ভদ্রমহিলা নিজের ছোট্ট সন্তানকে বলে উঠেন, বাবু দেখ, দেখ, ওই যে ওই লোকটি আমাদের ১৯৫০ বিশ্বকাপ জিততে দেয়নি! কথাটা বলার সময় ভদ্রমহিলা এমনভাবে তাকিয়েছিল, যেন ঘৃণার ছুরি দিয়ে আমাকে খুন করে ফেলবে!’

ঘিঘিয়াওয়ের ওই গোলের পর ব্রাজিলের আর সবার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন বারবোসা নিজেই। বুকফাটা সেই কষ্টটা বিশেষ এক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তও করেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে তার অন্য সতীর্থরা যখন কান্নায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, বারবোসা তখন গোলপোস্টের নেট ধরে উদাস বদনে তাকিয়ে থাকেন। বুঝিয়ে দেন, তিনি গোলপোস্টের জালে বন্দী! ওই ছবিটাই পরবর্তীতে তার জীবনের প্রতীকী ছবি হয়ে উঠে।

জীবনের শেষ দিকে একবার শ্যুট-টাই পরে স্টেডিয়ামে গিয়ে ঠিক সেভাবেই নিজেকে গোলপোস্টের নেটের আড়াল করে একটা ছবি তোলেন বারবোসা! এই ছবির মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন, ১৯৫০-এর মারাকানাজো ট্র্যাজেডি যেভাবে জালে বন্দী করেছিল তাকে, এখনো সেভাবেই বন্দী আছেন তিনি, ৫০ বছরেও মুক্তি মেলেনি তার!

শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘৃণা, অপমান, গালমন্দ থেকে অবশ্য তার মুক্তি মিলেছে। তবে ব্রাজিলের জনগণের পক্ষ থেকে নয়, তার মুক্তির দরজাটা খুলেছে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়— ২০০০ সালের ৭ এপ্রিল পরপারে পাড়ি জমানোর মধ্য দিয়ে। সৃষ্টিকর্তার ডাকে দুনিয়া ত্যাগের পর ব্রাজিলের মানুষও যেন কিছুটা নমনীয় হয়েছে। নয়তো গ্যাব্রিয়েল বারবোসার উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের আলোচনায় ২০ বছর আগে ওপাড়ে চলে যাওয়া বারবোসাকে স্মরণ করা হবে কেন!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.