বেরিয়ে আসছে শক্তিশালী গ্যাস, হুমকিতে মানব সভ্যতা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এ কারণে উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে ভয়াবহ হারে। এর ফলে সেখানকার মাটির নিচে জমে থাকা শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস বেরিয়ে আসছে, যা মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

উত্তর মেরুর বরফ গলছে

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে হারে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবীতে ভয়াবহ উষ্ণতা দেখা দেবে। সেই পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তেমনটি ঘটলে ওই অঞ্চলের শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাসের উপাদানগুলো দ্রুত উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

ধারণা করা হচ্ছে, পুরো উত্তর গোলার্ধের এক চতুর্থাংশে ১ হাজার ৬০০ বিলিয়ন টন অর্গানিক কার্বন বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে। এটি বর্তমানে পৃথিবীর উপরিভাগে যে পরিমাণ রয়েছে, তার দুই গুণ। এই কার্বন উন্মুক্ত হয়ে পড়লে পৃথিবীকে আর বাঁচানোর কোনো উপায় থাকবে না।

উত্তর মেরুর বরফ গলছে

সাম্প্রতিক সময়ে সাইবেরিয়ায় যে তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে, তা পৃথিবীর সম্ভাব্য বিপদকে আরো দ্রুত ডেকে আনছে। সেখানে মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের বড় ধরনের মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে মিথেন পৃথিবীর পৃষ্ঠে তাপমাত্রা আটকে রাখতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি শক্তিশালী। আর নাইট্রাস অক্সাইডের তাপ আটকে রাখার ক্ষমতা ১০০ বছরের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি।

এসব বিবেচনায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনোভাবে এই গ্যাস স্তরটি উন্মুক্ত হয়ে পড়লে পৃথিবীতে মহাবিপর্যয় ডেকে আনবে। এতে এতদিনের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সব ভবিষ্যতবাণী একেবারেই পাল্টে যাবে। এরইমধ্যে সে ধরনের বড় পরিবর্তন দেখা দিয়েছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাটি ওয়াল্টার অ্যান্থনি বলেন, মেরু অঞ্চলে আটকে থাকা গ্রিনহাউস গ্যাস বেরিয়ে আসতে ২০০-৩০০ বছর লাগার কথা। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না, আমার ও সন্তানের জীবদ্দশাতেই তা বাতাসে ভাসতে থাকবে।

আগামী ৩১ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে এবারের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এর আয়োজন করা হয়েছে। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য এতে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে বিশ্ব নেতাদের। সেটিকে সামনে রেখে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলো।