বিশ্ব গণমাধ্যমে গ্রেটা থুনবার্গের খোলা চিঠি

সুইডিশ স্কুলশিক্ষার্থী গ্রেটা থুনবার্গের পর উগান্ডার ২৪ বছর বয়সী এই তরুণী ভানেসা নাকাতেও পরিচিত হয়ে উঠেছেন জলবায়ু-বিচারক ও রাইজ আপ আন্দোলন প্রতিষ্ঠার কারণে। তারা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জলবায়ু সংকট উত্তরণে। আর ১৮ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু নিরাপত্তায় ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার আন্দোলনের জন্য পরিচিত বিশ্বব্যাপী। সম্প্রতি তারা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্ব গণমাধ্যমের কাছে। টাইম ম্যাগাজিনে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা লিখেছেন-

সুইডিশ স্কুলশিক্ষার্থী গ্রেটা থুনবার্গ

প্রিয় সম্পাদকগণ, গলিত হিমবাহ, দাবানল, খরা, মারাত্মক তাপপ্রবাহ, বন্যা, হারিকেন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এসব অস্থিতিশীল গ্রহের যাবতীয় লক্ষণ। এগুলো প্রতিনিয়তই আমাদের চার পাশে ঘটে চলেছে। এসবকে জলবায়ু সংকট বলে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বস্তুত জলবায়ু সংকট বিষয়টি আরও ব্যাপক। সে কারণে গণমাধ্যমে জলবায়ু সংকট নিয়ে রিপোর্ট করতে হলে অবশ্যই সংকটের মৌলিক বিষয়, সামগ্রিক চিন্তা-ভাবনা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে রিপোর্ট করতে হবে।

সেরা উপলব্ধ বিজ্ঞান বলছে, আমাদের বর্তমান নির্গমন হারের সঙ্গে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকার জন্য আমাদের অবশিষ্ট কার্বন বাজেট এই দশক শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। অথচ আমাদের সময় নির্ধারণ হচ্ছে ২০৩০, ২০৫০, ২০৬০ এভাবে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে জলবায়ু সঙ্কট একটি রাজনৈতিক বিষয়।

আমাদের অবশিষ্ট কার্বন বাজেট বিবেচনা করার সময় সব সংখ্যা গণনা করতে হবে এবং আমাদের সব নির্গমন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে আপনি উচ্চ আয়ের দেশ এবং বড় দূষণকারীদের তাদের অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান, ফাঁকিবাজির আড়ালে লুকিয়ে রাখতে দিচ্ছেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করতে গত ৩০ বছর ধরে কঠিন লড়াই করেছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ন্যায়বিচার। জলবায়ু সংকট শুধু চরম আবহাওয়া নিয়েই নয়, এই সঙ্গে মানুষও সম্পৃক্ত। যারা জলবায়ু সংকট সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে কম দায়ী, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের সত্যবাক্য কারও মুখেই দেখি না। এটা ন্যায়বিচার নয়। বিশ্বকে বাঁচানোর আন্দোলনে আপনি আপনার নৈতিক দায়িত্বকে উপেক্ষা করতে পারেন না।

প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যের নিচে থাকার জন্য এবং এর ফলে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অপরিবর্তনীয় শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়া তৈরির ঝুঁকি কমাতে আমাদের অবিলম্বে কঠোর হতে হবে। অথচ বার্ষিক নির্গমন হ্রাস এখন পর্যন্ত বিশ্ব দেখেনি। এই সংকট মোকাবেলায় আমাদের নেতাদের ব্যর্থতা অস্বস্তিকর।

কার্যকর গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হলো একটি মুক্ত সংবাদ। মিডিয়াকে অবশ্যই ক্ষমতায় থাকা জনগণকে তাদের কর্ম বা নিষ্ক্রিয়তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। জলবায়ু সঙ্কট আরও জটিল হতে চলেছে। আমরা এখনো খারাপ পরিণতি এড়াতে পারি, আমরা এখনও এটিকে ঘুরিয়ে দিতে পারি। এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।