ক্ষুধার তাড়না: নাতনিদের বিক্রির ক্রেতা পাচ্ছেন না সামিমি

আগে থেকেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছিল। গেল আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখল করায় তা আরো কয়েক গুণ বেড়েছে। এর মধ্যেই আফগানিস্তানের টাকা জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমাদের প্রভাবের কারণে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও ঋণ দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঠনগুলো দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় এমনকি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

দুই নাতনির সঙ্গে রুহমান সামিমি

দেশটির কিছু কিছু এলাকায় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, মানুষ বেঁচে থাকার ন্যূনতম খাবার পর্যন্ত যোগার করতে পারছে না। তারই একটি চিত্র তুলে ধরেছে তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদুলু। সেখানে দেখানো হয়েছে, খাবার ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে না পেরে নিজের দুই নাতনিকে বিক্রি করার ক্রেতা খুঁজছেন এক বৃদ্ধা। কিন্তু দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও কোনো ক্রেতা খুঁজে পাননি তিনি। আফগানিস্তানের পার্বত্য হিন্দুকুশ অঞ্চলের ঘোর প্রদেশের ঘটনা এটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রদেশটির বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সী রুহসানা সামিমি তার জেনেত ও জিবা নামে দুই নাতনিকে বিক্রি করে দিতে চান। মাত্র ৪ ও ৬ বছর বয়সী দুই শিশুকে বিক্রি করে নিজের ছেলের চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের সংস্থান করতে চান ওই বৃদ্ধা। জেনেতকে ২ লাখ আফগানি মুদ্রা বা ২ হাজার ২০০ ডলার এবং জিবাকে ১ লাখ আফগানি মুদ্রা বা ১ হাজার ১০০ ডলারে বিক্রি করতে চান রুহসানা সামিমি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে তাদের বিক্রির চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা পাননি তিনি।

পরিবারের বরাত দিয়ে আনাদুলু জানিয়েছে, সামিমির পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেন তার ছেলে। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়েছেন। ফলে এতটা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে পরিবারটি। একদিকে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন সামিমির ছেলে। অন্যদিকে পরিবারে নেই কোনো খাবারের সংস্থান। ফলে নিরুপায় হয়ে দুই নাতনিকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন ওই বৃদ্ধা।

রুহসানা সামিমি চরম হতাশা প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সরকারি লোকজন কিংবা আত্মীয়-স্বজন কেউ তাদের এক মুঠো চাল অথবা খাবার দিয়ে সাহায্য করতে আসেনি। কোনো উপায়ান্তর না দেখে নিজের নাতনিদের বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ ছাড়া তার কাছে কোনো বিকল্প নেই।