বিচার শেষ হওয়ার আগেই ফাঁসি কার্যকর!

নজিরবিহীন, ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ঘটেছে দেশের বিচারিক ইতিহাসে। বিচার শেষ হওয়ার আগেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে দুই আসামির! যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর। সম্প্রতি ওই দুই আসামির পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল

বিষয়টি জানার পর বিচারকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বললেও কম বলা হবে, এটা স্রেফ ‘জুডিশিয়াল মার্ডার’। বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে এটি একমাত্র ঘটনা। এর আগে প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলে এমন একটি ঘটনার কথা জানা যায়। তাই এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

জানা যায়, ওই দুই আসামির নাম আবদুল মোকিম এবং গোলাম রসুল। তাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে। ১৯৯৪ সালে ওই গ্রামে চরমপন্থি ক্যাডারদের হাতে খুন হন তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনোয়ার হোসেন। সেই ঘটনায় ২১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। আসামির তালিকায় ছিলেন আবদুল মোকিম ও গোলাম রসুল।

বিচারের এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয় এই দুজনের বিরুদ্ধে। বাকিরা খালাস পেয়ে যান। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আইনি বিধান অনুযায়ী, আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে ফাঁসি কার্যকরের আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। শুরু হয় বিচারের আরেক ধাপ।

শুধু তাই নয়, যদি আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়, তারপরও প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায় না। আসামিরা তখন রিভিউ আবেদন করতে পারেন। যদি সেই রিভিউ খারিজ হয়ে যায়, তাহলে বাকি থাকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। এটিই হলো আইন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। অথচ এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে বিচারের দুটি ধাপ শেষই হয়নি!

আরও ভয়াবহ হলো, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, এটা উচ্চ আদালত জানেই না! ফাঁসি কার্যকরের ৩ বছর পর আসামিদের পক্ষ থেকে করা আপিল আবেদন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলে বিষয়টি জানাজানি হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকরে কারা জড়িত ছিলেন, দ্রুত তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।