পাসপোর্ট ছাড়াই বিশ্ব ভ্রমণ!

ইন্টারনেটের বর্তমান যুগে বলা হয়, ইন্টারনেট মানে আপনার হাতের মুঠোয় গোটা বিশ্ব। অন্তর্জাল দুনিয়ার মাধ্যমে নজর রাখতে পারেন পুরো পৃথিবীতে। এমনিতে বিশ্ব ভ্রমণে লাগবে পাসপোর্ট, ভিসার কত হাজারো জটিলতা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এক্সপো আসলে আপনার মনে হবে না, বিশ্ব প্রদক্ষিণে এতকিছু লাগে। পাসপোর্ট ছাড়াই ঘুরতে পারবেন বিশ্বময়। বিশ্বের ২১৭ দেশের ১৯২টিই আপনার হাতের নাগালে।

দুবাই এক্সপো

যদিও দুবাই এক্সপোতেও একটা পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। ২০ দিরহাম দিয়ে যা কিনতে হয়। অনেক দর্শনার্থীই সেটি ব্যবহার করছেন। নতুন নতুন প্যাভিলিয়নে যাচ্ছেন আর বিভিন্ন দেশের সিল পড়ছে সেই পাসপোর্টে। বিশ্ব ভ্রমণের অপার তৃপ্তি মিলছে। গত ১ অক্টোবর দুবাইয়ে শুরু হয়েছে এক্সপো, শেষ হবে আগামী বছর মার্চে। পাঁচ বছর পর পর হয় এমন এক্সপো। ২০২৫ সালে জাপানের ওসাকায় বসবে এক্সপোর আসর। প্রতিবারই নির্বাচন করা হয় এক্সপোর স্বাগতিক দেশ।

গত শনিবার আমিও গিয়েছিলাম এক্সপো দর্শনে। আরব আমিরাতের বিভিন্ন জায়গা থেকেই বিনামূল্যের বাস ছেড়ে যায় দুবাই এক্সপো ভেন্যুতে। শারজাহর আল জুবেইল বাস স্ট্যান্ড থেকে সকাল ৯টায় আমি বাসে উঠি। ধারণ ক্ষমতার তুলনায় যাত্রী বেশি, বেশিরভাগই ভারতীয়। অগত্যা দাঁড়িয়েই যেতে হলো পুরো পথ। ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর বাসটা গিয়ে থামে এক্সপোর অপরচুনিটি গেইটে।

দুবাই এক্সপো ২০২০

সামনেই স্টিলের নির্মিত বিশাল গেইট। এক্সপোতে প্রবেশের সৌজন্য টিকিট সংগ্রহ করলাম। ঢুকতেই দেখাতে হয়েছেন করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ। স্ক্যানিংয়ের ধাপ পার হয়ে এক্সপো সিটিতে প্রবেশ করলাম। ১ হাজার ৮০ একর জমি জুড়ে এক্সপো হচ্ছে। অংশ নিচ্ছে ১৯২টি দেশ। যেখানে তিন জেলায় সব দেশকে ভাগ করা হয়েছে। সাসটেইানবিলিটি ডিস্ট্রিক্ট, অপরচুনিটি ডিস্ট্রিক্ট এবং মবিলিটি ডিস্ট্রিক্ট। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পড়েছে সাসটেইনাবিলিটি সিটিতে।

৬০ নম্বর প্যাভিলিয়নটাই বাংলাদেশের। তিন তলা প্যাভিলিয়ন, সামনের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি। আরেকপাশে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ছবি। প্যাভিলিয়নে ঢুকতেই সদ্য কৈশোরত্তীর্ণ এক মেয়ে ও এক ছেলে স্বাগত জানালো। নিচতলায় প্যাভিলিয়নের প্রদর্শনীর দায়িত্বে শুধু ওরা দুজন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি চোখে পড়ল সবার আগে। পাশেই ৭ই মার্চের ভাষণের ভিডিও চলছে, দেয়াল জুড়ে ডিজিটাল বোর্ডে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড,, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর, দেশের পাটের তৈরি নানা জিনিসপত্র, তাঁতের শাড়ি, পাঞ্জাবি, জাতীয় ক্রিকেট দলের মাঠের লড়াইয়ের ছবি দেখলাম।

বিভিন্ন দেশের দর্শনার্থীরা আসছেন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নেও। রুমানিয়া, নেপাল থেকে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কিছুটা আলাপ সেরেই বের হয়ে যাই। পুরো এক্সপো না হোক, কয়েকটা প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখার ইচ্ছা। জানা গেছে, ভাড়ায় নেয়া বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের খরচ নাকি ২২ কোটি টাকা। অন্য দেশের প্যাভিলিয়ন দেখতেই মনে প্রশ্ন উদয় হলো, আদৌ ২২ কোটি টাকার ছাপ রয়েছে কি প্যাভিলিয়নে?

মালদ্বীপ, কানাডা, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, পুর্তগালসহ কয়েকটি প্যাভিলিয়নের সৌন্দর্য, ব্যবস্থাপনা দেখে প্রীত হলাম। কুয়েত, কানাডার প্যাভিলিয়ন যেন থিয়েটার। কাতার প্যাভিলিয়নে আসন্ন ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ছোঁয়া ছিল। পর্তুগাল ৫ মিনিটের ভিডিওতে পুরো দেশটা তুলে ধরেছে। কিন্তু সেখানেই নেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালাদোর উপস্থিতি।

হাজারো মানুষের উপস্থিতি এক্সপোতে। কয়েকটা প্যাভিলিয়ন ঘুরতেই দিনের আলো ফুরিয়ে সন্ধ্যা নেমে যায়। শারজাহ ফেরার বাসে উঠে বসি আমি, বিশ্বকে দেখার রোমাঞ্চ নিয়ে।