জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এবার পরমাণু শক্তি!

জলবায়ু সংকটের সমাধান হিসেবে এবার সম্ভবনাময় জ্বালানি পরমাণু শক্তির কথা জোরেসোরে আলোচিত হচ্ছে। পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণে এই শক্তিকে এক সময় খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। দশকের পর দশক ধরে এই শক্তিকে বিশ্বের গুটিকয়েক দেশ ও অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এটাকেই জলবায়ু সংকট সমাধানের অন্যতম উপায় মনে করা হচ্ছে। জ্বালানির পালে পরমাণু শক্তির হাওয়া লেগেছে। শনিবার এএফপির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জলবায়ু সংকট মোকাবেলার সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে পরমাণু শক্তি

জাতিসংঘের শীর্ষ পরমাণু আলোচক ও আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পরমাণু শক্তি বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা সমস্যার সমাধানের অংশ। এর বিকল্প কমই আছে। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ‘ক্লিন বা পরিবেশবান্ধব’ জ্বালানির এক-চতুর্থাংশই আসছে পরমাণু শক্তি থেকে। আর তাই এবারের সম্মেলনে বিষয়টা বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে। পরমাণু জ্বালানি নিয়ে হাওয়া বদলে যাচ্ছে।

পরমাণু শক্তি একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় জ্বালানি। কারণ এই শক্তি পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় উপাদান কার্বন উৎপাদন করে না। তবে পরমাণু শক্তির সবচেয়ে বড় সমস্যা এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এ বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা যায় না ও প্রাণিকূলের জন্য হুমকি। এছাড়া ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল ও সম্প্রতি ফুকুশিমা পরমাণু বিপর্যয়ের পর এই শক্তিকে এক প্রকার ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশ এর উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

এমনকি গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে এর পক্ষে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। তবে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে সেই চিত্র পুরোই উল্টে গেছে। এবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ২৬ পরমাণু শক্তির সমর্থকদের সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে।

বছরের পর আলোচনা, সম্মেলন ও চুক্তি করেও কোনো কাজ হয়নি। এবারের জলবায়ু সম্মেলনকে ‘শেষ আশা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা চলতি মাসের শুরুর দিকে গ্লাসগোতে শুরু হয়ে এখনও চলছে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে হলে চলতি শতকের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে আগামী এক দশকের মধ্যেই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ অবশ্যই অর্ধেক কমাতে হবে।

কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো ভুল পথেই এগোচ্ছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের এক রিপোর্ট মতে, চলতি বছরের কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২০২৩ সালে এই নিঃসরণ নতুন উচ্চতায় উঠতে পারে। জলবায়ুর এমন পরিস্থিতিই মূলত পরমাণু শক্তির প্রতি বিশ্বনেতাদের মনোযোগ কাড়ছে।