বাংলাদেশ দলে রাসেল-পোলার্ডদের মতো পেশীশক্তির কোনো ব্যাটার নেই। বিভিন্ন সময়ে টাইগার প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এ কারণেই ফিনিশিং দুর্বলতা ও স্লগ ওভারে রান তোলায় ঘাটতি। যার মাসুল প্রতিনিয়ত দিচ্ছে বাংলাদেশ।

ashraful aftabদুজনই হারিয়ে গেছেন সময়ের পরিক্রমায়

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো দুই দুটো ম্যাচ ফিনিশিং ঘাটতির কারণে জিততে পারেনি টাইগাররা। প্রথমটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দ্বিতীয়টা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আশা জাগিয়ে দুটো ম্যাচেই নিরাশ করেছে বাংলাদেশ। অথচ ম্যাচ দুটিতে জেতার জন্য বিগ হিটারের দরকার পড়েনি।

একটু কৌশলী এবং সাবধানী ব্যাটিং করলেই ম্যাচ দুটো জেতা যেত। তা হয়নি। বরং দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচটা দিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো হারার জন্য সব আয়োজন করে রেখেছিল। বিস্ময়করভাবে তা কাজে লাগাতে পারল না টাইগাররা।

এমন হার অবশ্য নতুন কিছু নয়। এরচেয়ে সহজ ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৬ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুর হারটা তো একেবারে হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে। তিন বলে দুই রান দরকার ছিল। এক-দুই রান নিয়েই ম্যাচটা জিততে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহদের পেয়ে বসে ছক্কার নেশা।

শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানা দঁড়ির সামনে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন দুজনই। শেষ বলে শুভাগত হোম ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি। মোস্তাফিজুর রহমান স্ট্রাইকিং প্রান্তে আসার আগেই উইকেট ভেঙে থ্রিলার জয় তুলে নেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আবারো তীরে এসে তরী ডুবল।

এই বিশ্বকাপে অবশ্য জয়ের অতটা কাছে ছিল না বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অল্প রানে আটকানোর পর জয়ের আশা ছিল। স্বাভাবিক টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেললেই চলতো। অথচ দুটো ম্যাচই টাইগাররা টেনে নিয়ে গেছে শেষ দিকে। অথচ নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য যতটুকুই আছে তার যথাযথ প্রয়োগটা করলে হেসেখেলেই প্রতিপক্ষকে হারানো যেত।

কারণ ১৪০-১৫০ রান তাড়া করতে বিধ্বংসী কোনো ব্যাটার লাগে না। আসলে সমস্যাটা অন্যখানে। গোড়ায় গন্ডগল। এই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ১৬ দলের মধ্যে বাংলাদেশই পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে কম রান করেছে। সবচেয়ে হতাশার জায়গা হচ্ছে নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, পিএনজির মতো দলও শুরুর ছয় ওভারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি রান তুলেছে!

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারছে না আরেকটা কারণে। পরিস্থিতির দাবি মাটিয়ে ব্যাট করতে পারে না টাইগাররা। কোন সময় কোন শট খেলা দরকার সেটা বুঝতে না পারা। মুশফিকুর রহিমের কথাই ধরুন। শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে।

অথচ আপনি শুনলে কিঞ্চিৎ ধাক্কা খাবেন যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুশিই (৩৩) বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার! আর এবারের বাংলাদেশ দল তো ১৬ দলের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। কিন্তু পারফরম্যান্সে অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে তারা। শিশুতোষ সব ভুল করেছে।

বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচেই হারতে হয়েছে স্কটল্যান্ডের কাছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যা মোটেও অঘটন ছিল না। পরের ম্যাচে তো আরব আমিরাতের কাছে হারতে হারতে জিতেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে পিএনজিকে হারানোর পর একটা বড় স্বস্তি এসেছে দলে। মূলপর্বের টিকিট মিলেছে।

এই পর্বে বরবারের মতো এবারো ব্যর্থ বাংলাদেশ। মূলপর্বে টাইগারদের দ্বিতীয় জয়টা আর এলো না। এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে সেই প্রশ্নের উত্তর তোলা থাকল ভবিষ্যতের হাতে। আপাতত মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে প্রথম জয়টার কথা। ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।

১৪ বছর আগে সেই ম্যাচে ১৬৪ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা। তাও আবার দুই ওভার ও ছয় উইকেট হাতে রেখেই! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওটাই বাংলাদেশের প্রথম এবং শেষ জয়। ম্যাচটার নায়ক বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল। সেদিন প্রবল চাপের মুখেই পরিস্থিতির দাবি মেটান তিনি।

২৮ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ও তামিম ইকবালের উইকেট। এরপরই জোহানেসবার্গে ওঠে আশরাফুল ঝড়। আর উইকেটের লাগাম টেনে ধরার কাজটা করেন আফতাব আহমেদ। ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন আশরাফুল।

ম্যাচ জয়ী ইনিংসটাতে ২০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। ওই ইনিংসে বাহারি শটের পসরা সাজিয়েছিলেন আশরাফুল। বাংলাদেশ অধিনায়কের দেখানো পথে হেঁটে ম্যাচটার দারুণ একটা ফিনিশিং করেন ভরসার আরেক প্রতীক আফতাব।

সাত চার ও তিন ছক্কার পর থামে আশরাফুল ঝড়। ৪৯ বলে ৬২ রানের অজেয় ইনিংসে আটটি চার ও এক ছক্কা মারেন আফতাব। বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ দল আর এমন ফিনিশিং উপহার দিতে পারেনি। তাই টাইগারদের প্রতিটা হারের পর জোহানেসবার্গের স্মৃতিটা সামনে চলে আসে।

ফিক্সিংকাণ্ডে জড়িয়ে ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ হন আশরাফুল। নির্বাসন কাটিয়ে ক্রিকেটেও ফিরেছেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে আন্তর্জাতি ক্রিকেট নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হওয়া আশরাফুলকে আর জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিস্ময়করভাবে তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে দেন নির্বাচকরা।

এমন পরীক্ষিত ও প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটারকে ফেরার মঞ্চের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঠান তারা। অথচ মোহাম্মদ আমির, সুনিল নারাইন, সাঈদ আজমলদের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারও নিষেধাজ্ঞ কাটিয়ে সরাসরি ফিরেছেন জাতীয় দলে। তাহলে আশরাফুলকে কেন আর ফেরানো হলো না?

প্রশ্ন জাগে আশরাফুল কি ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মার? বাংলাদেশের অনেক জয়ের প্রথমে এই তারকার নাম জড়িয়ে। তিনি মূলত বড় মঞ্চের ক্রিকেটার। আশরাফুলকে সুযোগ না দিয়ে বছরের পর বছর সৌম্য সরকার, লিটন দাসের মতো ক্রিকেটারের ঘানি টানছে দল। দলে তৈরি হয়নি আর কোনো আফতাব।

দুজনই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য আদর্শ। আশরাফুলের ২৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১২৬.৪০। মোট রান ৪৫০ রান। বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচে ২১২ রান তার। আছে দুটো হাফসেঞ্চুরি। ছয় ম্যাচে ১৬৩ রান আফতাবের। তন্মধ্যে হাফসেঞ্চুরি একটা। দুজনই হারিয়ে গেছেন সময়ের পরিক্রমায়। তবে আশরাফুল এখনও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর আফতাব খেলা ছেড়ে পেশা হিসেবে কোচিংকে বেছে নিয়েছেন।

বাংলাদেশ দলে এখন যারা আছেন তাদের বেশির ভাগই টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খেলার উপযুক্ত নন। তামিম ইকবালকে উপযুক্ত মনে করা হলেও এই ফরমেটে তার আবেদন অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে। বোধহয় এ কারণে বিশ্বকাপের আগে নিজেকে দল থেকে গুটিয়ে নেন বাঁ-হাতি ওপেনার।

এবারের আসরে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে লিটন ও সৌম্যকে নিয়ে। প্রথমজন বিশ্বকাপে আট ম্যাচে রান করেছেন ১৩৩। আর ১১ ম্যাচে ১০২ রান সৌম্যর। মুশফিকুর রহিম সাতটি বিশ্বকাপ খেলেও ব্যাটিং গড় ১৮-তে নিতে পারেননি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ৩০ ম্যাচে ব্যাটিং গড় ১৮.১৫।

সাকিব আল হাসান এখানে ব্যতিক্রম। ৩১ ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় প্রায় ২৭। এসব পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সৌম্য, লিটন, মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিক টি-টোয়েন্টির মেজাজে নেই। বাংলাদেশ দলে আমূল পরিবর্তনের ভাবনা আসাটাই স্বাভাবিক। শোনা যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দল থেকে খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া হবে জাতীয় দলে।

হয়তো আসবে অনেক নতুন মুখ, ঝরে পরবেন অভিজ্ঞরা। এই পালা বদলের প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন উঠবে দুটি, আশরাফুল-আফতাবের মতো বিধ্বংসী কোনো ব্যাটার আসবেন তো? কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের মানসিকতার বদল হতে তো? এটা তো সবচেয়ে বেশি জরুরি!

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.