আদালতের প্রশ্নবাণে ইমরান খানের সাবলিল জবাব

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তলব করা হলে আজ বুধবার তিনি হাজির হন দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। এ সময় নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয় তাকে, যার সাবলীল উত্তরও দিয়েছেন ক্যারিশমেটিক এই নেতা। এদিন পাক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদ ও ইমরান খান মুখোমুখি হন।

গুলজার আহমেদ ও ইমরান খান, ফাইল ছবি

ডন জানায়, ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলায় ১৩২ শিশুসহ ১৪৯ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা এক মামলার শুনানি চলছে দেশটির প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। এর মধ্যেই হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান, টিটিপির সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতির চুক্তি করেছে ইমরান খানের সরকার, যা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।

ওই ঘটনার পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে এটর্নি জেনারেল খালিদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে এখনো জানেন না জবাব এলে তাকে আদালতে তলব করেন পাক প্রধান বিচারপতি। সে অনুযায়ী আজ হাজির হলে ইমরান খানকে টিটিপির সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে জানতে চান সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টে ইমরান খান

পেশোয়ার হামলার উদাহরণ টেনে কোন যুক্তিতে নিষিদ্ধ সংগঠনটির সঙ্গে চুক্তি করল সরকার, জানতে চাওয়া হয় পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, তার দল ক্ষমতায় থাকতেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক ওই ঘটনাটি ঘটেছিল। তারপর ওই অঞ্চলে ৪৮০ বার ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় ৮০ হাজার মানুষের। এসব হামলা কে বা কারা করেছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে এগুলোর উত্তর আপনার দেয়া দায়িত্ব এবং উত্তর আপনার কাছে থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর জবাব, পাকিস্তান কোনো ছোট দেশ নয়, বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সামরিক শক্তি। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীকে ভর্ৎসনা এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে গোয়েন্দা সংস্থা কোথায় থাকে, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পেশোয়ার হামলায় সাবেক সেনা প্রধানসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল কিনা। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই ঘটনায় সামরিক বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্তকারী দল। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, সরকারের দাবি পাক গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাদের পেছনে প্রতি মাসে কোটি কোটি রুপি খরচ করার আউটপুট শূন্য!

টিটিপি যোদ্ধারা, ফাইল ছবি

ইমরান খানের উপস্থিতিতে বিচারপতি ইজাজ উল আহসান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন নিহত শিশুদের পরিবার। জবাবে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চালু করা হয়। দেশে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা জয়লাভ করেছি। এ সময় আদালত বলেন, নিহত শিশুদের পরিবারের দাবি অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আদালতকে আশ্বস্ত করেন ইমরান খান।

প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইমরান খানের মতবিরোধ থাকায় এদিন সুপ্রিম কোর্টে কী ঘটতে যাচ্ছে, জানতে উদগ্রীব ছিল পাকিস্তানিরা। কেননা, এর আগে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল এই সুপ্রিম কোর্টই। তবে এ যাত্রায় তেমন কিছুই ঘটেনি, এটাই সবার জন্য স্বস্তির!