চিড় ধরেছে পাকিস্তান-চীন বন্ধুত্বে!

পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে তথাকথিত 'সব-আবহাওয়ার বন্ধুত্ব' নড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এবং চায়না মোবাইল পাকিস্তান (সিএমপাক) ইস্যুতে বেইজিংয়ের হাতে ইসলামাবাদের অপমানিত হওয়ার ঘটনা এমন ধারণাকে আরও জোরালো করেছে।

বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, টাইমস অফ ইসরায়েলে সার্জিও রেস্তেলি বলেছেন, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে 'পাহাড়ের চেয়ে উঁচু', 'মহাসাগরের চেয়ে গভীরে' ফাটল দেখা দিয়েছে। উভয় দেশ তাদের বন্ধুত্বকে নজিরবিহীন বলে দাবি করলেও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন।

রেস্তেলি বলেন, পাকিস্তানের জনগণ ভেবেছিল জিনজিয়াংয়ের কাশগর থেকে আরব উপকূলের গোয়াদর পর্যন্ত ৬২ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) তাদের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে৷ কিন্তু এখন তাদের জন্য এটি দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার দিন থেকেই, স্বচ্ছতার অভাব, প্রদত্ত ঋণের লুকানো শর্তাবলী, পাকিস্তানে চীনা শ্রমিকের আগমন এবং ঋণ বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সিপিইসি থেকে উদ্ভূত পাকিস্তানের দুর্ভোগের দীর্ঘ তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে গত ১৪ জুলাইয়ে বোমা বিস্ফোরণে নিহত চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাকিস্তানের কাছে ৩৮ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছে চীন।

চলতি ৫ নভেম্বরের মিডিয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে, সার্জিও বলেছেন যে, পাকিস্তানভিত্তিক মোবাইল ডেটা নেটওয়ার্ক অপারেটর জং নামের অধীনে ব্যবসা করে থাকে। যার শতভাগ বিনিয়োগ চীনের। সেই চায়না ক্যাপিটাল মোবাইল পাকিস্তানের (সিএমপাক) একটি টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার অশান্ত উত্তর ওয়াজিরিস্তানে বিস্ফোরক দ্বারা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার দায়দায়িত্ব ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।

টাইমস অফ ইসরায়েলে তিনি আরও লেখেন, চীনা ঋণ ইতিমধ্যে পাকিস্তানের জন্য আর্থিক বোঝার ফাঁদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রতিটি দিন এই বোঝা আরও ভারী হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানে নতুন করে বড় বিনিয়োগ প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে চীন। অধিকন্তু চীন এখনও তিনটি বড় মহাসড়ক প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল ছাড়েনি। (এগুলো হলো-২১০ কিমি ডেরা ইসমাইল খান-ঝাব রোড, ১১০ কিমি খুজদার-বাসিমা রোড এবং কারাকোরাম হাইওয়ের ১৩৬ কিমি রায়কোট থেকে থাকোট অংশ)। অর্থছাড়ে বিলম্ব মানে পাকিস্তানের জন্য তা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ। কিন্তু চীন সরকার গত তিন বছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তহবিল বন্ধ করে রেখেছে।

শেষের দিকে সার্জিও আরও উল্লেখ করেন, বেইজিং তার কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে তার সব আবহাওয়ার ভালো বন্ধু পাকিস্তানকে কেবল ব্যবহার করেছে, এটা বোঝার এখনই শেষ সময়।