আপনি পড়ছেন

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনে ২০১৯ সালে প্রাণ হারান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিশেষায়িত এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ‘সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না, বরং উল্টো চিত্রই মিলছে।

buet bsl chatradalবুয়েট, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের লোগো

জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যে গত বছরের ২৪ জুলাই বুয়েটে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেই থেকে বিএনপির এই ছাত্র সংগঠনটির এই শাখার নেতা সক্রিয় রয়েছেন। অন্যদিকে, আবরার হত্যার পর বুয়েট ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ে জোর বিতর্ক চললেও এখন পর্যন্ত কমিটি ভাঙার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির এই শাখার নেতাদের সক্রিয়ও দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, আসিফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও আলী আহমদকে সদস্যসচিব করে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এর পরই কমিটির বিভিন্ন পদধারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ। জবাবে তাদের অনেকে জানান, তারা প্রায় সবাই সাবেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ সম্মতি ছাড়াই কমিটিতে পদ পাওয়ার কথাও বলেছেন।

abrar fahad 25 new 1আবরার ফাহাদ ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বুয়েটেও তারা স্বাভাবিকভাবে কমিটি দিয়েছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকতে পারে না, এই সিদ্ধান্ত তারা মানেন না।

২০১৯ সালের ২৪ মে ছাত্রলীগের ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ, যার সভাপতি খন্দকার জামী উস সানী আর মেহেদী হাসান রাসেল সাধারণ সম্পাদক। এর মধ্যে আবরার হত্যায় অভিযুক্ত ১১ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলেও পুরো কমিটি ভেঙে দেয়নি সংগঠনটি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, বয়েটে ছাত্র রাজনীতি একেবারে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক। ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো বাদ দেয়ার বিষয়টি সামনে আসতে পারে, তা না করে রাজনীতিই বন্ধ করে দেয়া যায় না।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিন্নতর হওয়ায় বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ছিল। সবশেষ আবরারকে নির্মমভাবে হত্যার পর বিকল্প কৌশল তৈরির বিষয়টি জোরদার হয়। সে অনুযায়ী ছাত্ররাজনীতির বিকল্প একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, সে জন্য একটু সময় লাগবে।

ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ছাত্রদলের কমিটির পদধারীরা বিশ্ববিদ্যায়টির বর্তমান শিক্ষার্থী নন। সাবেক হওয়ায় এসব নেতার বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। আর ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়া না হলেও তারা ক্যাম্পাসে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে না। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ কার্যকর থাকায় এখানে কোনো সংগঠন কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

এ বিষয়ে বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেছেন, তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে সজাগ আছেন এবং থাকবেন। কোনো ছাত্র যাতে বিপথে না যায়, সেজন্য প্রশাসন এখানে ছাত্র রাজনীতি চাইছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক, ডিএসডব্লিউ অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে তাদের প্রচেষ্টায় কোনো কমতি নেই। তবে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর পরদিন আবরারের বাবা বাদী হয়ে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৩ নভেম্বর এজাহারভুক্ত ১৯ জনসহ ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী।

ওই ঘটনায় বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে তার মধ্যে বেশকিছু দাবি মেনে নেয় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রশাসন। এরমধ্যে প্রধান তিনটি দাবি ছিল- আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগের র‍্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তিসহ এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ।