আপনি পড়ছেন

উপমহাদেশের নারীরা বিয়ের সময় আর কিছু না হোক, অন্তত একটা লাল টুকটুকে বেনারশি পাওয়ার আশা করেন। সময়ের পরিবর্তনে হয়তো রঙ বা কাপড়ের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু কনেদের সেই চাওয়া নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এই বেনারশি জোগাড় করাটা অনেক গরীব পরিবারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ।

dress bankনাসের থুথার ড্রেস ব্যাংক

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার মালাপ্পুরম জেলার থুথা গ্রামে গড়ে উঠেছে ড্রেস ব্যাংক। নাসের থুথা নামের ৪৪ বছর বয়সী একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার এর উদ্যোক্তা। ব্যাংকটি এখন পর্যন্ত ২৬০টিরও বেশি সুবিধাবঞ্চিত কনেকে তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনের জন্য বিনামূল্যে পোশাক সরবরাহ করেছে।

সৌদিফেরত নাসেরের মাথায় আসা এই ব্যাংকটি বাস্তব রূপ নেয় গত বছরের এপ্রিলে। হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ব্যবহার করে নাসের বিবাহিত নারীদের তাদের পড়ে থাকা বিয়ের পোশাকটি দান করার অনুরোধ জানান। ভিন্নধর্মী আবেদনে বেশ সাড়া মেলে। কিছুদিনের মধ্যেই তার ঠিকানায় বিয়ের পোশাকের ভারি ভারি প্যাকেটগুলো আসতে শুরু করে।

nasar thoothaনাসের থুথা

নাসের বলেন, অনেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, বিয়ের পোশাকগুলো এমনিতেই পড়ে থাকে। বিয়ের দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য কেবল এগুলো পরা হয় এবং তারপর আর কখনোই আলমারি থেকে বের করা হয় না। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকেই আমাদের উদ্দেশ্য সমর্থন করে এগিয়ে আসেন।

দান করা পোশাকগুলো দাতব্য সংস্থা এবং বন্ধুদের মাধ্যমে কেরালার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো ধোয়া-পরিষ্কার-শুকানোর পর এয়ারটাইট প্যাকেটে নাসের থুথার ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয়।

নাসের জানান, যে কোনো কনের পরিবার ফেসবুকের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তারপর তারা তাদের পোশাক পছন্দ করে নিয়ে যেতে পারে কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই। এমনকি কারো কাছে যদি এখানে এসে পোশাক নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পোশাকটি সরাসরি তাদের কাছে পাঠানো হয়।

নাসের বলেন, বিয়ের পোশাক নেয়া এসব পরিবারকে আমরা কখনোই বলি না, পোষাকটি ফেরত দিন। তবে আমরা তাদেরকে শাড়িটা অন্য অভাবীদের কাছে পাঠাতে উৎসাহিত করি।

এই উদ্যোগ এতটাই সফল হয়েছে যে, নাসের থুথার ব্যাংকে বর্তমানে আট শতাধিক পোশাক রয়েছে। এগুলোর একেকটির দাম পাঁচ হাজার থেকে ৫০ হাজার রুপি পর্যন্ত। এসব পোশাকের মধ্যে মুসলিম, খ্রিষ্টান বা হিন্দু কনেদের উপযোগী পোশাক রয়েছে।

নাসের আরো জানান, এখন শুধু কেরালা থেকে নয় বরং প্রতিবেশী রাজ্য কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু থেকে, এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের অনাবাসী ভারতীয় সম্প্রদায় থেকেও এসব পোশাক আসতে শুরু করেছে।

মুম্বাইয়ের সাকিনা খান (নাম পরিবর্তিত) জানান, তিনি তার বিয়ের জন্য এ ড্রেস ব্যাংক থেকে একটি গোলাপী বেনারসি সিল্ক শাড়ি পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহার এটি। তিনি বলেন, এই গ্রীষ্মে যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতে আঘাত হানে তখন আমার বাবা-চাচা দুজনেই মারা গিয়েছিলেন। আমি স্কুল শিক্ষকের চাকরিও হারিয়েছি। আমার মা, যিনি চার বাড়িতে খাবার রান্না করেন, এখন তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য।

তিনি আরো বলেন, আমার বিয়ে উপলক্ষে খাবারসহ বিভিন্ন কিছুতে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছি। তাই বিয়ের পোশাক কেনার জন্য কোনো টাকা অবশিষ্ট ছিল না। পরে আমরা ফেসবুকে নাসেরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি একটি ভিডিও কলের মাধ্যমে পোশাক বেছে নিতে সাহায্য করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে শাড়িটি আমাদের ঠিকানায় চলে আসে। যখন প্যাকেটটি এসেছিল, তখন আমি ও আমার মা আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়ি।

নাসের জানান, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর, বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তা দেয়ার সময় আমি এমন অনেক পরিবার দেখেছি, যারা তাদের মেয়েদের বিয়ের পোশাক সাজানোর জন্য লড়াই করছিল, যা সাধারণত ব্যয়বহুল। তাই আমি তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

তবে এখন পর্যন্ত নাসেরর স্টকে কেবল কনের পোশাকই রয়েছে। বরের পোশাকের কোনো কালেকশন সেখানে নেই। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বরের পোশাকের জন্য কোনো অনুরোধ পাইনি। তবে যদি ভবিষ্যতে এ ধরনের আবেদন পাই, তখন সেগুলো বিবেচনা করব।

সূত্র: আল জাজিরা

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.