ল্যাটিন আমেরিকায় বামপন্থীদের জয়জয়কার
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০২১ সালে ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক পরিবর্তন বিস্ময়কর। বছরজুড়ে যে কয়টা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়েছে তাতে রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে ডানপন্থীদের। জয়জয়কার উত্থান ঘটেছে বামপন্থীদের। মূলত বহু বছরের জেঁকে বসা দারিদ্র্য আর সামাজিক অসমতা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছে ল্যাটিন জনগণ। আর তাই ধনী এলিটদের ছুঁড়ে ফেলে নতুন নেতা ও নীতির পক্ষে সিল মেরেছে ‘ক্ষুব্ধ’ ভোটাররা। ফলে একবিংশ শতকের তৃতীয় দশক শুরুতেই এক ডজনের বেশি প্রগতিশীল সরকার পেয়েছে ল্যাটিন আমেরিকা। যাকে অনেকেই বামপন্থীদের ‘বিজয়ের দশক’ হিসাবে অভিহিত করছে।
গাব্রিয়েল বরিক, ফাইল ছবি
ল্যাটিন আমেরিকায় সম্প্রতি বামপন্থী রাজনীতির শক্তি অনেকটাই কমে আসে। ফের উত্থান ঘটে ডানপন্থীদের। ভোটের মাঠেও তারই প্রতিফলন দেখা গেছে। ২০২১ এর জানুয়ারি পর্যন্তও তাদের পাল্লাই ভারি ছিল। অর্থনীতির ক্ষেত্রে উদারনীতির এজেন্ডা ও জনবিরোধী নীতিই বাস্তবায়ন করছিল সরকারগুলো। তবে কয়েক মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি একেবারেই উল্টে গেছে। ডিসেম্বর শেষে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ দেশেই ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বামপন্থী সরকার। পেরু চিলি হন্ডুরাস আর আর্জেন্টিনায় যে পরিবর্তন এসেছে তা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
চিলিতে গত সপ্তাহেই শেষ হয় দুই ধাপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে জয় পেয়েছেন তরুণ বামপন্থী নেতা গাব্রিয়েল বরিক। প্রতিদ্বন্দ্বী অতি ডানপন্থী হোসে আন্তোনিও কাস্তকে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করেন ৩৫ বছর বয়সি এই ছাত্রনেতা। এই নির্বাচনে ২০১২ সালের পর সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে।
ল্যাটিন আমেরিকার মানচিত্র
২০২১ সালের শুরু থেকে ল্যাটিন আমেরিকায় বামপন্থীদের যে জয়জয়কার সূচনা চিলির নির্বাচন ছিল তারই ধারাবাহিকতা। অঞ্চলজুড়ে ল্যাটিন ভোটাররা এমন নেতার খোঁজ করেছেন যিনি দশকের পর দশক ধরে চলে আসা তীব্র সামাজিক বৈষম্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে টেনে তুলতে পারবেন। আর এ জন্যই স্বপ্নবাজ ও পরিবর্তনকামী তরুণ রাজনীতিক বরিককেই প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে চিলির জনগণ।
২০১৯ সালে চিলিজুড়ে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী গণআন্দোলন থেকে উঠে আসেন গাব্রিয়েল বরিক। প্রায় তিন দুই বছর ধরে চলা দুর্বার ছাত্র আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন বামপন্থী এই ছাত্রনেতা। আগামী মার্চে শপথ নেওয়ার পর তিনিই হবেন চিলির সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট। যদিও বরিককে ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন তার সমালোচকরা। কিন্তু তার ভাবনা ভিন্ন।
চিলির এই প্রেসিডেন্ট সব সময় ইউরোপের কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলে এসেছেন। তার চাওয়া চিলি তেমনই একটি রাষ্ট্র হোক। অতি দক্ষিণপন্থী কাস্তের ভাই ছিলেন চিলির একনায়ক অগাস্তো পিনোশের অন্যতম উপদেষ্টা। নির্বাচনী প্রচারে পিনোশেটের গুণগান করেছেন। পিনোশেটের একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন কাস্ত। চিলির সংবাদমাধ্যমের দাবি, কাস্তের জার্মান বাবা নাৎসি ছিলেন। তিনি জিতলে স্বাভাবিকভাবেই চিলিতে আবার পিনোশেটের শাসনব্যবস্থা চালু করতেন।
হন্ডুরাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, ফাইল ছবি
চলতি বছরেই হন্ডুরাসে ডানপন্থী সরকারকে উৎখাত করেছে বামপন্থীরা। শুধু তাই নয়, নভেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পেয়েছে হন্ডুরাস। বামপন্থীদের এই জয়ের ফলে হন্ডুরাসে ডানপন্থী ন্যাশনাল পার্টি সরকারের ১২ বছরের শাসন-শোসনের অবসান হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জুলিয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্ডেজের আমলে মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আমেরিকায় মাদক পাচার কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। দেশের জনগণকে ‘চরম দুর্দশা থেকে বের করে আনা’ এবং মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার শপথ নিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট শিওমারা কাস্ত্রো।
কাস্ত্রোর স্বামী এবং এলআইবিআরই-র কোঅর্ডিনেটর ম্যানুয়েল জেলায়া ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অভ্যুত্থানের ফলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
গত মাসে আর্জেন্টিনার এক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মধ্যপন্থী পিরোনিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে দেশটির ভোটাররা। গত কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল পিরোনিস্টরা। তবে এবারই প্রথমবারের মতো সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে দলটি।
বিশ্ব গণমাধ্যমে খুব কমই শিরোনাম হয় পেরু। তবে চলতি বছরের জুনে হঠাৎই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে দরিদ্র দেশটি। এর কারণ আর কিছুই নয়। একজন স্বল্প পরিচিত গ্রাম্য স্কুলশিক্ষক থেকে বামপন্থী রাজনীতিককে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে দেশটির জনগণ। ওই শিক্ষকের নাম পেদ্রো কাস্তিলো। পারিবারিক ইতিহাস, দারিদ্র্য, পেশা কোনো কিছুই তাকে প্রেসিডেন্ট হতে বাধা দিতে পারেনি।
পেদ্রো কাস্তিলো, ফাইল ছবি
২০২০ সালের অক্টোবরে ‘ফ্রি পেরু’ নামে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন কাস্তিলো। কাস্তিলোর ক্যাম্পেইনের স্লোগান ছিল, ‘ধনী দেশে কোনো দরিদ্র মানুষ নয়।’ জুন মাসের নির্বাচনে এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ডানপন্থী নেতা কিকো ফুজিমোরিকে হারিয়ে দেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হলেও এখনো তিনি ভালোবাসেন মাটিকে। ভালোবাসেন কৃষিনির্ভর জীবিকা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। নিজেই হালচাষে নেমে পড়েন নিজের জমিতে, কখনো অন্যের জমিও চষে দেন। খেত-খামারি-চাষে একটুও অহংকার পড়েনি তার মনে। আর তাই শুধু পেরু নয়, বিশ্বজুড়েই তিনি এখন পরিচিত ‘মাটি ও মানুষের নেতা’ হিসাবে।
প্রেসিডেন্ট যেমন ঠিক তেমনি ফার্স্টলেডিও। এখনো সকাল হলেই গোয়াল থেকে গরু বের করেন। নিজের হাতেই পরিষ্কার করেন গোবর। বাড়ির আঙিনায় খুঁটি পুঁতে গরু বাঁধেন। রান্নাও করেন নিজের হাতেই। বাঁশের চোঙে ফুঁ দিয়ে উনুনে আগুন ধরান। পরিবারের প্রিয় মানুষগুলোর জন্য রান্না করেন ভাত-তরকারি। গ্রামের আর ১০টা গৃহবধূর মতোই এমনই সাদাসিধে জীবন লিলিয়া পারেদেসের।
নির্বাচনে জয়লাভ করলে নতুন প্রেসিডেন্টকে থাকতে হয় প্রেসিডেন্ট ভবনে। কিন্তু সাবেক এ শিক্ষক রাজধানী লিমার বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট ভবনে থাকছেন না। পাঁচশ বছর ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা এই ভবনকে তিনি জাদুঘর করছেন। এ ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে কাস্তিলো বলেন, আমি পেরুর এমন অংশ থেকে এসেছি যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী নিপীড়িত ও বঞ্চিত হয়েছে। একজন গ্রাম্য শিক্ষক এখানে ধনী হতে আসেননি। আমি হাউজ অব পিজারোতে (প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ) থাকব না। ঔপনিবেশিক এসব প্রতীকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে না পারলে প্রকৃত মুক্তি আসবে না। দেশের মানুষই এ পরিবর্তনের রায় দিয়েছে। যারা বৈধভাবে সম্পদ অর্জন করছে, তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.