নারী পর্যটকদের জন্য কক্সবাজারে ‘বিশেষ এলাকা’

কক্সবাজারে একজন নারীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখানে নারীদের জন্য আলাদা সংরক্ষিত এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়ার পাশাপাশি হোটেল-মোটেলসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলছেন, কক্সবাজারে আসা নারী পর্যটকদের জন্য আলাদাভাবে কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। নারী পর্যটক বা পর্দানশীন নারী যারা রয়েছেন, তাদের জন্য ১০০ বা ১৫০ ফিটের একটি পৃথক ও সংরক্ষিত এলাকা করা হবে। যাদের ইচ্ছে হবে, সেখানে গিয়ে পানিতে নামতে পারবেন। দ্রুতই সেটি চালু করা হবে। সৈকতে নারীদের জন্য আলাদা ড্রেসিং রুম ও লকার রুম করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, কক্সবাজারের পর্যটন এলাকাগুলোকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য সৈকতে যারা কাজ করেন, তাদের মধ্যে অনেক নারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার ট্যুরিস্ট পুলিশের মধ্যেও নারী সদস্য রয়েছেন।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া নারী পর্যটকরা কক্ষ ভাড়া নিতে চাইলে হোটেলগুলো দিতে চায় না। আবার কেউ বিপদে পড়লে কোথায় যোগাযোগ করবে, কীভাবে করবে- সেসব তথ্যও থাকে না। এমনকি পর্যটন এলাকাগুলোর হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণও নারী বা শিশুদের জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়- এ সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আবু সুফিয়ান জানান, হোটেল বা গেস্ট হাউজে যেন পর্যটকরা নিরাপদে থাকতে পারেন, এ ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিয়েছেন। মালিক ও পরিচালকদের সঙ্গে তারা বৈঠক করেছেন। হোটেল কর্মীদের এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ ও সচেতন হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের সাত দফা নির্দেশনা
কক্সবাজারের হোটেল মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত শুক্রবার বিকালে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে সেখানকার নিরাপত্তায় বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান এসব তথ্য জানান।

হোটেল-মোটেল ও পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের পর যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সকল আবাসিক হোটেলে রুম বুকিং করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও জমা দিতে হবে। আবাসিক হোটেলগুলোয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে। প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, মূল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা, রেস্তোরায় খাবারের মূল্য তালিকা প্রকাশ্যে প্রদর্শন করতে হবে।

প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে অথবা জোরদার করতে হবে। শহর এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের কক্ষ ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হোটেল-মোটেল বা গেস্ট হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। সকল হোটেল-রেস্তোরাঁর নিবন্ধন করতে হবে।

কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া এক নারীকে অপহরণের পর একটি হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঘটনার শিকার নারীকে ওই গেস্ট হাউজ থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই ঘটনার পর কক্সবাজারে নারী পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়।