আপনি পড়ছেন

বিশ্বব্যাপী অভিবাসন ও শরণার্থী সংকট বেড়েই চলেছে। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে সমস্যাটা অনেকটাই ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু সংকট আদৌ কমেনি। করোনার মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে একাধিকবার নানা বিধিনিষেধ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আর লকডাউন দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও ২০২১ সালে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।

syrian refugeesসিরিয়ান শরণার্থী, ছবি সংগৃহীত

দারিদ্র্য, সংঘাত ও সহিংসতা থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে অসহায় মানুষ। ফলে দেশে দেশে শরণার্থীদের স্রোত দেখা গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য মতে, বিশ্বে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ২ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। ফলে মোট শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪০ লাখ।

২০২০ ও ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর উদ্বাস্তু হওয়ার হার নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি। ইতিহাসেও এর আগে এমনটা দেখা যায়নি। জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইএমও’র প্রধান আন্তনিও ভিতোরিনো বলছেন, যে সময় করোনার কারণে কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিক সে সময় লাখ লাখ মানুষ তাদের নিজ দেশেই পরবাসী হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দারিদ্র্য ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতই শরণার্থী সংকটের মূল কারণ। অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনের আশায়ই নিজ ভিটে-মাটি ছাড়ছে মানুষ। ২০২১ সালজুড়েই দেশে দেশে নজিরবিহীন যুদ্ধ, সংঘাত ও সহিংসতা দেখা গেছে।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। যা এসব অঞ্চলের অগণিত মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। এসব মানুষ হয় নিজ দেশেই অন্য কোনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। নতুবা দূরের উন্নত কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছে। পিছিয়ে নেই এশিয়ার দেশগুলোও। গত কয়েক দশক ধরেই শরণার্থী সংকট আফগানিস্তানে।

২০ বছরের মার্কিন ও ন্যাটো আগ্রাসনে যা আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। পশ্চিমা সেনাদের পলায়নের পর সশস্ত্র অভিযানের মধ্যদিয়ে চলতি বছরের ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখল করে তালেবান। জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই লাখের মতো। তালেবান আসার পর সেই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে এখন ৩৫ লাখ।

অভিবাসন সমস্যা ল্যাটিন বা মধ্য-আমেরিকার দেশগুলোতেও নিতান্ত কম নয়। চলতি বছর মেক্সিকো ও মধ্য-আমেরিকায় মানুষ যে হারে উদ্বাস্তু হয়েছে তাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।

ইউএনএইচসিআর’র তথ্য বলছে, অভাব-অনটন, সংঘাত আর করোনা মহামারির কারণে এ বছর এই অঞ্চলের বিশেষ করে হন্ডুরাস ও হাইতির মতো দরিদ্র দেশগুলো থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক উদ্বাস্তু হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।

এছাড়া শরণার্থীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে মেক্সিকো। এর প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্র। কোনো প্রকারে মেক্সিকো সীমান্ত পার হতে পারলেই ‘কেল্লাফতে’। কিন্তু সে পর্যন্ত পৌঁছতে চরম মূল্য দিতে হয় অভিবাসীদের। প্রায়ই সীমান্তরক্ষীদের নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হতে হয়।

চলতি বছরের শুরুর দিকেই গুয়াতেমালা সীমান্তে ঘটে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা। জানুয়ারির শুরুর দিকে হন্ডুরাস থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করে প্রায় দুই হাজার অভিবাসীর একটি কাফেলা। ১৪ জানুয়ারি সীমান্ত পার হয়ে তারা গুয়াতেমালায় ঢুকে পড়ে। এ সময় তাদের ওপর বৃষ্টির মতো টিয়ারগ্যাস ফেলা হয়। নির্বিচারে করা হয় লাঠিচার্জ।

অভিবাসীদের ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আর সবচেয়ে শক্তিশালী লোহার প্রাচীর বানিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, এই সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত একটি রক্ষী বাহিনী। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই (২৩-২৪ সেপ্টেম্বর) ঘটে বর্বর ঘটনা। মধ্য-আমেরিকার দেশ হাইতি থেকে একদল অভিবাসী সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের ওপর মধ্যযুগী কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়।

চলতি বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে এসে পৌঁছায় কয়েক হাজার অভিবাসী। প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও ইরাক থেকে আসা এই অভিবাসীরা পোল্যান্ড হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে চাইছিল। কিন্তু পোল্যান্ড তাদের ঢুকতে দিতে রাজি নয়। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে সীমান্তে আটকা পড়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। মারাও যায় অনেকে। এ যেন এক নিদারুণ সংকট।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.