বারাদার: আশরাফ ঘানিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল না

আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে কাবুল দখল করার সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল না। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন, আফগান উপ প্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বারাদার।

আবদুল গনি বারাদার ও আশরাফ ঘানি

জানা যায়, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় ভীত হয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। একদিকে চারপাশ থেকে তালেবানের রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসা, অন্যদিকে মার্কিনিদের চলে যাওয়া- এ দুই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন আশরাফ ঘানি। অন্যদিকে মার্কিন এবং তালেবান দুই পক্ষই চুক্তির বিষয়ে তাকে তেমন কিছু জানানোর প্রয়োজন বোধ করছিল না। এ অবস্থায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়া গুজবে শোনা যাচ্ছিল, তালেবানরা অচিরেই রাজধানী কাবুল দখল করবে। আর সেক্ষেত্রে তারা প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে হত্যা করবে।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশরাফ ঘানি দাবি করেন, তার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে এই খবর দিয়েছিল, কাবুল দখল করার পরপরই তাকে হত্যা করা হবে। তবে তালেবান উপ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, আশরাফ ঘানিকে হত্যা করার কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না। আফগানিস্তানের বহু রাজনীতিবিদ দেশেই বসবাস করছেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

কাবুল থেকে ফিরে আসছেন মার্কিন সেনারা

আফগানিস্তানের আরেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ওই সময়ে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছিলেন, দোহা চুক্তি অনুসারে ধীরে ধীরে মার্কিন সেনারা দেশটি থেকে সরে যাচ্ছিল এবং তালেবান লড়াই করে কাবুলের উপকণ্ঠে এসে হাজির হয়। তবে চুক্তি অনুসারে তালেবান আর না এগুনোর সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবস্থায় ১৫ আগস্ট ভীত হয়ে আশরাফ ঘানি পালিয়ে গেলে তালেবানকে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আমন্ত্রন জানানো হয়। পরে তারা বিনা বাধা ও রক্তপাতে কাবুলে প্রবেশ করে।

এদিকে ওই সাক্ষাৎকারে আব্দুল গনি বারাদার আরো বলেন, তারা সাবেক আশরাফ ঘানি সরকারের মন্ত্রীদের তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে তালেবান সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে চান না।

তিনি বলেন, দোহায় আমেরিকার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে ঘানি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর নাম প্রস্তাব করে তাদেরকে নিয়ে যৌথ সরকার গঠন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দুর্নীতিতে অভ্যস্ত ঘানি সরকারের কর্মকর্তারা আমাদের সরকারে আসতে পারবে না। তাদের নেওয়া হলে আমাদের শাসনব্যবস্থার বদনাম হয়ে যাবে। কারণ এসব কর্মকর্তা দূর্নীতি, হত্যা ও লুটতরাজে এতটা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল, যা থেকে তাদের বিরত রাখা সম্ভব নয়।

বারাদার এমন সময় এ বক্তব্য দিলেন, যখন অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠনের জন্য তালেবানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই বলেছে, অংশগ্রহণমূলক সরকার গঠন ছাড়া তারা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না।