২০২৩ নির্বাচন: তরুণ ভোটারদের টানতে মরিয়া এরদোয়ান

ইউসুফ জিয়া গুলার প্রায় সাত মিলিয়ন তুর্কিদের একজন যিনি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে একমাত্র নেতা মেনে বেড়ে উঠেছেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তিনি ভোট দিতে পারবেন। তার মতো এরকম লাখো তরুণ আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন। এএফপি।

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান

বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, সমবয়সীদের মতো গুলারও এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকা প্রথম দশকে তুরস্কের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের স্মৃতি মনে করেন। তবে তার দ্বিতীয় দশকে অশান্তির ছাপ স্পষ্ট হতে শুরু করে। গুলার বলছেন, আমি ভবিষ্যত সম্পর্কে হতাশায় ভুগছি। ২০ বছর বয়সী মেডিকেল ছাত্র গুলার সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সন্দিহান।

তিনি এএফপিকে বলেন, আমরা বর্তমানে একটি অপ্রত্যাশিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি স্নাতক হওয়ার পর কী ঘটবে তা চিন্তা করি না, এমনকি আগামী পাঁচ মাসে কী ঘটবে তাও জানি না। বর্তমান অবস্থা নিয়েই বেশি চিন্তা করি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন তরুণ ভোটাররাই এরদোয়ানের আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার একটি চাবিকাঠি। তার একে পার্টিকে তিন দশকে ক্ষমতায় রাখার চাবিকাঠিও তরুণ ভোটার। তাদের আগলে ধরে রেখেছেন এরদোয়ান।

কিন্তু ২০০২ সালের মতো চিন্তা যুবকদের এখন নেই। তারা মনে করছে, বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতার জন্য এরদোয়ান সরকার অনেকাংশেই দায়ী। এ বিষয়টি নিয়ে তারা অনেক খোলামেলা মত প্রকাশ করছে। এর মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি, বিপর্যস্ত মুদ্রা এবং অর্থনীতি। যেখানে ৪০ শতাংশের বেশি কর্মী ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে।

তুরস্কের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক আয়কা আলেমদারোগ্লু বলছেন, আজকের ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে শাসক দল কি দিতে পারছে, আর তরুণরা কী চায় তার মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দেবে।

৬৭ বছর বয়সী এরদোয়ান ও তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) তরুণদের আকৃষ্ট করতে অনলাইন প্ল্যাটফরম বেছে নিচ্ছে। অনলাইন সমাবেশসহ কিশোরদের কাছে পৌঁছানোর উপায় হিসেবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ব্যাপারে এরদোয়ান ও তার দল চরম সচেতন।

২০২১ সালের নভেম্বরে রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের জন্য ছয় দিনের উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেন, আগামী নির্বাচনের চাবিকাঠি হল আমাদের তরুণরা। ঐতিহাসিকভাবে একেপি অল্পবয়সী ভোটারদের মধ্যে কিছু আবেদন ধরে রেখেছে। এরদোয়ানের উদ্বোধনী ভাষণের পর পুরো নভেম্বর উৎসবে হাজার হাজার তরুণ যুবক আকৃষ্ট হয়েছে।

উত্তর কারসাম্বা জেলার একেপি যুব শাখার সভাপতি আবদুলসামেত সেমিজ বলছেন, কিশোর তরুণরা যেসব পরামর্শ পছন্দ করে না সেগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে না। বিরোধীরা বলছে, তরুণরা একেপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে এমন কিছু নেই। এগুলো মিথ্যা। একেপি তরুণদের সবচেয়ে বেশি যত্ন করে।

পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার জন্য বয়স ২৫ থেকে ১৮-এ নামিয়ে আনার জন্য এরদোয়ানের প্রশংসা করেছে তরুণরা। এই ঘোষণা এরদোয়ানের প্রতি তরুণদের ভক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমরুল্লাহ সমাবেশে বলেন, তরুণদের জন্য কিছু দুর্দান্ত কাজ হচ্ছে।

খবরে বলা হচ্ছে, শুধু একেপি নয়, তরুণ ভোটারদের আস্থা অর্জন করা সব দলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তুরস্কের ৮১টি প্রদেশে ৩ হাজার তরুণ-তরুণীর উপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তরুণদের ৫৮ শতাংশ উন্নত সমাজ গড়তে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন বা দলে যোগ দিতে অনিচ্ছুক।

রাজনৈতিক দল বা সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে তরুণদের আস্থা খুব কম। রাজনৈতিক কর্মী পোলস্টার মুরাত গেজিসি বলছেন, ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের মধ্যে অনেক সিদ্ধান্তহীন ভোটার রয়েছে।

বিশেষ করে পরবর্তী নির্বাচনে তরুণদের তুলনায় তরুণীরা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একেপির ১৮.৪ মিলিয়ন সদস্যের মধ্যে ৩২.৬ শতাংশ তরুণী রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাই বলা হচ্ছে, যেকোনো নির্বাচনে তরুণরা তুরস্কের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।