২০২২ সালেও ভয়াবহ যুদ্ধ-সংঘাত দেখবে বিশ্ব!

করোনাভাইরাস ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। ২০২২ সালেও ভাইরাসটি আরও ভয়ংকর রূপ নেওয়ার পথে রয়েছে। একইভাবে নতুন বছরে যুদ্ধ, সংঘাত, সংঘর্ষ লেগেই থাকবে। আগের সূত্রগুলো মিলিয়ে দেখলে ইউক্রেন, তাইওয়ান, রাশিয়া, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইসারায়েল কেন্দ্রিক যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা চলমান থাকতে পারে।

নতুন বছরে যুদ্ধ, সংঘাত, সংঘর্ষ লেগেই থাকবে!

মিয়ানমার জান্তাও চরম যুদ্ধবাজ। একইভাবে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিনও পরিণত হবে যুদ্ধের ময়দানে। এ রকম ৭ সম্ভাব্য সংঘাতের ইঙ্গিত দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ।

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট: ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করা রাশিয়া তার প্রতিবেশীকে আবার আক্রমণ করবে কি-না তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু সম্ভাব্য বিপদকে ধোঁকা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০২১ সালে বেশ কয়েক দফা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দু-দেশ। সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। পুতিন ক্ষেপে গিয়ে নতুন ‘লাল রেখা’ টেনেছেন ন্যাটোর ওপর। ফলে সংঘাত বাধতেই পারে।

আফগানিস্তানের অন্তর্যুদ্ধ: যদিও ২০২১ সালে আফগানিস্তানে কয়েক দশকের দীর্ঘ মর্মান্তিক অধ্যায়ের যবনিকা ঘটেছে, তবু আরেকটি যুদ্ধের জন্য আফগানদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। এতে জনবিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। দেশটির ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা আর দারিদ্র্যই দেশটিতে চলতি বছর নতুন করে অন্তর্সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।

দুই ‘দৈত্য’ যখন মুখোমুখি: অকাস চুক্তি ক্যানবেরাকে পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন অর্জনে সহায়তা করবে। এতে বেজায় ক্ষেপেছে চীন। তাছাড়া হংকংয়ে বিরোধীদের দমন, জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে নৃশংস আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের চীনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইওয়ানের নিরাপত্তা রক্ষা, দক্ষিণ চীন সাগরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দাবির সমর্থন আরও জোরালো করেছে দেশটি। এতে চীন-মার্কিন যুদ্ধ অসম্ভব কিছু নয়।

ইরান বনাম মার্কিন-ইসরায়েল: সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা ম্লান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সামনের মাসগুলোতে চুক্তিটি আশার আলো না দেখলে ইরানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভবত মূল চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাবে। আর তখনই হবে মহাদুর্যোগের সূত্রপাত। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বাধাহীনভাবে অব্যাহত থাকবে। এমনটি হলে ইরানে হামলা করতে যেকোনো সময় ইসরায়েলকে নির্দেশ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

অস্থির ইসরায়েল-ফিলিস্তিন: গত বছরে এক দশকের মধ্যে চতুর্থ এবং সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং একের পর এক ফিলিস্তিনি নাগরিক হত্যা সেই সংঘাতকে নতুন করে ডেকে আনার প্রস্তুতি চলছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নতুন করে শপথ নিয়েছে। সংগঠনটির প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারে নিরন্তর সংঘাত: গণতন্ত্রকামী নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণের দৃশ্য অবলোকন করেছে বিশ্ববাসী। অং সান সু চিসহ ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে সাধারণ মানুষ। বছরজুড়েই সেনাবাহিনীর অব্যাহত হত্যাযজ্ঞ দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহী সশস্ত্র গ্রুপও সক্রিয় রয়েছে। আর সে কারণেই গৃহযুদ্ধ আসন্ন ।

ইয়েমেনের সংঘাত: ইয়েমেনের যুদ্ধ ২০২১ সালে শিরোনাম থেকে বিবর্ণ হয়ে গেলেও এ বছর দেশটির পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। হুথি বিদ্রোহীরা তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ মারিবের গভর্নরেট ঘেরাও করে অগ্রসর হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালে শক্তিশালী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামরিক বিজয় অর্জন করবে হুথিরা। তাই ধরেই নেওয়া যায়, ইয়েমেনের আরেকটি প্রাণঘাতী সংঘাত বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছে।